বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে কিছু চরিত্র আছেন, যাদের জীবন যেন একটি প্রতীকের নাম। নিপীড়নের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো, অসম সাহস, অটল দেশপ্রেম এবং মানবিক শক্তির এক বিরল সম্মিলন-মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবি (বীর প্রতীক) সেইসব বিরল চরিত্রদের একজন। তিনি বাংলাদেশের নারী শক্তির গোপন ও মহিমান্বিত ইতিহাস।
মাত্র ১৩ বছরের কিশোরী, অথচ একসময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে বিভ্রান্ত করে, অস্ত্র হাতে সম্মুখযুদ্ধে লড়ে, গুপ্তচর সেজে শত্রু শিবিরের অন্তঃস্থলে প্রবেশ করে, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য জীবনবাজি রেখে তথ্য এনে দিয়েছেন-এমন এক কিংবদন্তী নারী আমাদের ইতিহাসে আর কেউ নন, তারামন বিবি।
তারামন বিবির জন্ম ১৯৫৭ সালে কুড়িগ্রাম জেলার চর রাজিবপুর উপজেলার কোদালকাটি ইউনিয়নের শংকর মাধবপুর গ্রামে। চরাঞ্চলের অসহায় বাস্তবতা, ভাঙন, নদী, তীব্র দারিদ্র্য-এসবই ছিল তার শৈশবের পরিবেশ। তার আসল নাম ছিল তারাবানু।
ছোটবেলা থেকেই শ্রমসাধ্য জীবনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠা এ কিশোরীর ছিল তীক্ষ্ণ বুদ্ধি, ক্ষিপ্রতা আর এক অদ্ভুত দৃঢ় মানসিকতা। এই কিশোরীটি জানত না, খুব শীঘ্রই তার জীবনধারাই বদলে যাবে, তিনি হয়ে উঠবেন মুক্তিযুদ্ধের এক জীবন্ত গল্প।
সাল ১৯৭১। উত্তাল সময়। মাত্র ১৩ বছরের তারাবানুর গ্রাম হয়ে ওঠে যুদ্ধের আবর্ত। গ্রামে পাকিস্তানি সৈন্য নেমছে, চারদিকে আতঙ্ক, লুটপাট। তার গ্রাম পড়েছিল ১১ নম্বর সেক্টরের অধীনে, যার নেতৃত্বে ছিলেন সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল আবু তাহের।
একদিন মুক্তিযোদ্ধা মুহিব হাবিলদার তাদের বাড়িতে এসে জানালেন-ক্যাম্পে রান্না, ধোয়া-মোছার জন্য একজন মেয়ে দরকার। তারাবানুর মা প্রথমে রাজি হননি; যুদ্ধের আগুনে মেয়েকে পাঠানো কি সহজ কথা? কিন্তু মুহিব হাবিলদারের আশ্বাস “ও আমার ধর্ম মেয়ে। সব দায়িত্ব আমার।” অবশেষে মায়ের মন গলল।
সেই মুহূর্ত থেকেই শুরু তারাবানুর নতুন যাত্রা। ক্যাম্পেই তার নামের শেষে যোগ হয়-তারামন।
ক্যাম্পে তিনি রান্না করতেন, কাপড় ধুতেন, অস্ত্র পরিষ্কার করতেন। কিন্তু এগুলোই তার শেষ কাজ ছিল না। তাঁর চোখের দীপ্তিতে মুহিব হাবিলদার বুঝতে পারলেন-এই কিশোরী শুধু কাজ করতে আসেনি, লড়তে এসেছে।
মুহিব হাবিলদার প্রথমে অবাক হলেও পরে তাকে রাইফেল শেখান। যেহেতু তিনি ছিলেন অল্পবয়সী ও শারীরিকভাবে ক্ষুদ্রকায়, তাই তাকে স্টেনগানও ব্যবহার করতে শেখানো হয়। দু’হাতে আগুন হয়ে ওঠা ১৩ বছরের কিশোরীটি খুব দ্রুত অস্ত্র ব্যবহারে পারদর্শী হয়ে ওঠেন। তার পর থেকেই তিনি আর কেবল ক্যাম্পের কন্যাই নয়, তিনি হয়ে উঠলেন একজন যোদ্ধা।
উত্তাল সেই দিন গুলোর মধ্যে কোনো একদিন মধ্যাহ্নভোজের সময় ক্যাম্পের সবাই যখন খেতে ব্যস্ত, তারামন নজর রাখছিলেন চারপাশে। সুপারি গাছে উঠে তিনি দেখলেন, পাকিস্তানিদের গানবোট দ্রুতগতিতে আসছে। তার সতর্কবার্তায় মুক্তিবাহিনী মুহূর্তেই অবস্থান নেয়, ঘণ্টার পর ঘণ্টা যুদ্ধ চলে। অন্যথায় সেই ক্যাম্পের সব মুক্তিযোদ্ধাই হয়তো সেদিন বেঁচে ফিরতেন না। এটা ছিল তারামন বিবির প্রথম বড় যুদ্ধ-অবদান।
তারামনের সবচেয়ে দুর্ধর্ষ ভূমিকা ছিল গুপ্তচর হিসেবে। তিনি কখনো-চুলে জট বাঁধা পাগলি, কখনো কাদা মাখা পথনারী, কখনো অঙ্গহানি হওয়া ভিখারিনীর অভিনয়ে পাকিস্তানি শিবিরে ঢুকে পড়তেন। হানাদাররা মনে করত-পাগল নারী ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা হাসত, অপমান করত, তিরস্কার করত। কিন্তু তাদের অগোচরে কিশোরী তারামন নিশ্চুপে পর্যবেক্ষণ করতেন শিবিরের প্রতিটি কোণ, অস্ত্রের অবস্থান, সৈন্যদের চলন-বলন, প্রতিরক্ষা দুর্বলতা।
তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বহু সফল অপারেশন পরিচালনা করে মুক্তিবাহিনী। মৃত্যুকে তুচ্ছ করে কিশোরীর এমন বুদ্ধিমত্তা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক অনন্য বিস্ময়।
১৯৭১ সালের অক্টোবর। দু’পাড়ের (খালিয়াডাঙ্গা-ভেলামারী) মাঝখানে খাল, এক পাশে মুক্তিযোদ্ধা, অন্য পাশে পাকিস্তানি সেনারা। এই সময়েই তারামন কাদা মাখা ‘পাগলী’ সেজে ঢুকে গেলেন সেনা ক্যাম্পে। দুরন্ত অভিনয় আর প্রবল বুদ্ধিমত্তায় তিনি ক্যাম্পের প্রতিটি রক্ষাব্যূহ বুঝে নিলেন। ফিরে এসে জানালেন, “কোথায় আক্রমণ করলে সবচেয়ে ভয়ংকর ক্ষতি হবে।”
এই তথ্যের উপর ভিত্তি করে পরদিনই হয় এক সফল আক্রমণ। এক কিশোরী সামলাতে পেরেছিল একটি অপারেশনের কৌশলগত মেরুদণ্ড-যা আজও বিস্ময়েরই নাম।
১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করে। কিন্তু বেদনাদায়ক বাস্তবতা তিনি নিজেই জানতেন না যে তিনি একজন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা!
চরাঞ্চলের দারিদ্র্য, সামাজিক অস্থিরতা, অজ্ঞাতেই দিন কেটেছে তার। বিয়ের পর তাঁর স্বামী আব্দুল মজিদও জানতেন না যে তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। স্বামী এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “হ্যায় যে মুক্তিযোদ্ধা-হেইটা বিয়ের পরও বুঝি নাই।” ১৯৯৫ সালে অধ্যাপক বিমল কান্তি দে, আবদুস সবুর ফারুকী ও সোলায়মান আলীর গবেষণা ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে তাকে পুনরায় বাংলাদেশ জানল।
২১ নভেম্বর ১৯৯৫। দৈনিক ভোরের কাগজের প্রথম পাতার শিরোনাম হল, “হারানো বীর প্রতীক তারামন বিবিকে খুঁজে পাওয়া গেছে।” ১৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী তার হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা তুলে দেন।
যুদ্ধোত্তর জীবন তার জন্য সুখকর ছিল না।
অসচ্ছলতা, অবহেলা, সরকারি সহায়তার অভাব-এসবই ছিল তার বাস্তব জীবন।
কিন্তু তবুও তার মুখে ছিল না অভিযোগ। তিনি বলতেন, “দেশ স্বাধীন হইছে—এটাই বড় কথা।”
এই নারী কণ্ঠের সরল বাক্যের ভিতরেই লুকিয়ে আছে এক জাতির মহত্তম মর্যাদা।
১ ডিসেম্বর ২০১৮। বিজয়ের মাসের প্রথম প্রহরে প্রয়াত হলেন তারামন বিবি। তার মৃত্যু যেন ইতিহাসের প্রতীকী দাগ। যেন বিজয়ের মাসেই স্বাধীনতার এক সত্যিকারের আলো নিভে গেলো।
কিন্তু তিনি রয়ে গেলেন ইতিহাসে বাংলাদেশের নারী সংগ্রামের প্রতীক, শক্তির উৎস, লড়াইয়ের প্রতিচ্ছবি হয়ে।
বিজয়ের মাস আমাদের শুধু গৌরবের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় না; আমাদের শেকড়, আমাদের সাহস, আমাদের অস্তিত্বের জন্মমুহূর্তকে নতুন করে চিনতে
Hrs Rakib
মোঃ রাকিব হাসান
কুড়িগ্রাম (রাজিবপুর) প্রতিনিধি
অগ্নিঝরা বিজয়ের মাসে ফিরে দেখা বঙ্গনারীর অগ্নিজন্ম, মুক্তির রণতরী, বীরকন্যা বীর প্রতীক তারামন বিবির অমর সাহস
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে কিছু চরিত্র আছেন, যাদের জীবন যেন একটি প্রতীকের নাম। নিপীড়নের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো, অসম সাহস, অটল দেশপ্রেম এবং মানবিক শক্তির এক বিরল সম্মিলন-মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবি (বীর প্রতীক) সেইসব বিরল চরিত্রদের একজন। তিনি বাংলাদেশের নারী শক্তির গোপন ও মহিমান্বিত ইতিহাস।
মাত্র ১৩ বছরের কিশোরী, অথচ একসময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে বিভ্রান্ত করে, অস্ত্র হাতে সম্মুখযুদ্ধে লড়ে, গুপ্তচর সেজে শত্রু শিবিরের অন্তঃস্থলে প্রবেশ করে, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য জীবনবাজি রেখে তথ্য এনে দিয়েছেন-এমন এক কিংবদন্তী নারী আমাদের ইতিহাসে আর কেউ নন, তারামন বিবি।
তারামন বিবির জন্ম ১৯৫৭ সালে কুড়িগ্রাম জেলার চর রাজিবপুর উপজেলার কোদালকাটি ইউনিয়নের শংকর মাধবপুর গ্রামে। চরাঞ্চলের অসহায় বাস্তবতা, ভাঙন, নদী, তীব্র দারিদ্র্য-এসবই ছিল তার শৈশবের পরিবেশ। তার আসল নাম ছিল তারাবানু।
ছোটবেলা থেকেই শ্রমসাধ্য জীবনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠা এ কিশোরীর ছিল তীক্ষ্ণ বুদ্ধি, ক্ষিপ্রতা আর এক অদ্ভুত দৃঢ় মানসিকতা। এই কিশোরীটি জানত না, খুব শীঘ্রই তার জীবনধারাই বদলে যাবে, তিনি হয়ে উঠবেন মুক্তিযুদ্ধের এক জীবন্ত গল্প।
সাল ১৯৭১। উত্তাল সময়। মাত্র ১৩ বছরের তারাবানুর গ্রাম হয়ে ওঠে যুদ্ধের আবর্ত। গ্রামে পাকিস্তানি সৈন্য নেমছে, চারদিকে আতঙ্ক, লুটপাট। তার গ্রাম পড়েছিল ১১ নম্বর সেক্টরের অধীনে, যার নেতৃত্বে ছিলেন সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল আবু তাহের।
একদিন মুক্তিযোদ্ধা মুহিব হাবিলদার তাদের বাড়িতে এসে জানালেন-ক্যাম্পে রান্না, ধোয়া-মোছার জন্য একজন মেয়ে দরকার। তারাবানুর মা প্রথমে রাজি হননি; যুদ্ধের আগুনে মেয়েকে পাঠানো কি সহজ কথা? কিন্তু মুহিব হাবিলদারের আশ্বাস “ও আমার ধর্ম মেয়ে। সব দায়িত্ব আমার।” অবশেষে মায়ের মন গলল।
সেই মুহূর্ত থেকেই শুরু তারাবানুর নতুন যাত্রা। ক্যাম্পেই তার নামের শেষে যোগ হয়-তারামন।
ক্যাম্পে তিনি রান্না করতেন, কাপড় ধুতেন, অস্ত্র পরিষ্কার করতেন। কিন্তু এগুলোই তার শেষ কাজ ছিল না। তাঁর চোখের দীপ্তিতে মুহিব হাবিলদার বুঝতে পারলেন-এই কিশোরী শুধু কাজ করতে আসেনি, লড়তে এসেছে।
মুহিব হাবিলদার প্রথমে অবাক হলেও পরে তাকে রাইফেল শেখান। যেহেতু তিনি ছিলেন অল্পবয়সী ও শারীরিকভাবে ক্ষুদ্রকায়, তাই তাকে স্টেনগানও ব্যবহার করতে শেখানো হয়। দু’হাতে আগুন হয়ে ওঠা ১৩ বছরের কিশোরীটি খুব দ্রুত অস্ত্র ব্যবহারে পারদর্শী হয়ে ওঠেন। তার পর থেকেই তিনি আর কেবল ক্যাম্পের কন্যাই নয়, তিনি হয়ে উঠলেন একজন যোদ্ধা।
উত্তাল সেই দিন গুলোর মধ্যে কোনো একদিন মধ্যাহ্নভোজের সময় ক্যাম্পের সবাই যখন খেতে ব্যস্ত, তারামন নজর রাখছিলেন চারপাশে। সুপারি গাছে উঠে তিনি দেখলেন, পাকিস্তানিদের গানবোট দ্রুতগতিতে আসছে। তার সতর্কবার্তায় মুক্তিবাহিনী মুহূর্তেই অবস্থান নেয়, ঘণ্টার পর ঘণ্টা যুদ্ধ চলে। অন্যথায় সেই ক্যাম্পের সব মুক্তিযোদ্ধাই হয়তো সেদিন বেঁচে ফিরতেন না। এটা ছিল তারামন বিবির প্রথম বড় যুদ্ধ-অবদান।
তারামনের সবচেয়ে দুর্ধর্ষ ভূমিকা ছিল গুপ্তচর হিসেবে। তিনি কখনো-চুলে জট বাঁধা পাগলি, কখনো কাদা মাখা পথনারী, কখনো অঙ্গহানি হওয়া ভিখারিনীর অভিনয়ে পাকিস্তানি শিবিরে ঢুকে পড়তেন। হানাদাররা মনে করত-পাগল নারী ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা হাসত, অপমান করত, তিরস্কার করত। কিন্তু তাদের অগোচরে কিশোরী তারামন নিশ্চুপে পর্যবেক্ষণ করতেন শিবিরের প্রতিটি কোণ, অস্ত্রের অবস্থান, সৈন্যদের চলন-বলন, প্রতিরক্ষা দুর্বলতা।
তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বহু সফল অপারেশন পরিচালনা করে মুক্তিবাহিনী। মৃত্যুকে তুচ্ছ করে কিশোরীর এমন বুদ্ধিমত্তা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক অনন্য বিস্ময়।
১৯৭১ সালের অক্টোবর। দু’পাড়ের (খালিয়াডাঙ্গা-ভেলামারী) মাঝখানে খাল, এক পাশে মুক্তিযোদ্ধা, অন্য পাশে পাকিস্তানি সেনারা। এই সময়েই তারামন কাদা মাখা ‘পাগলী’ সেজে ঢুকে গেলেন সেনা ক্যাম্পে। দুরন্ত অভিনয় আর প্রবল বুদ্ধিমত্তায় তিনি ক্যাম্পের প্রতিটি রক্ষাব্যূহ বুঝে নিলেন। ফিরে এসে জানালেন, “কোথায় আক্রমণ করলে সবচেয়ে ভয়ংকর ক্ষতি হবে।”
এই তথ্যের উপর ভিত্তি করে পরদিনই হয় এক সফল আক্রমণ। এক কিশোরী সামলাতে পেরেছিল একটি অপারেশনের কৌশলগত মেরুদণ্ড-যা আজও বিস্ময়েরই নাম।
১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করে। কিন্তু বেদনাদায়ক বাস্তবতা তিনি নিজেই জানতেন না যে তিনি একজন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা!
চরাঞ্চলের দারিদ্র্য, সামাজিক অস্থিরতা, অজ্ঞাতেই দিন কেটেছে তার। বিয়ের পর তাঁর স্বামী আব্দুল মজিদও জানতেন না যে তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। স্বামী এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “হ্যায় যে মুক্তিযোদ্ধা-হেইটা বিয়ের পরও বুঝি নাই।” ১৯৯৫ সালে অধ্যাপক বিমল কান্তি দে, আবদুস সবুর ফারুকী ও সোলায়মান আলীর গবেষণা ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে তাকে পুনরায় বাংলাদেশ জানল।
২১ নভেম্বর ১৯৯৫। দৈনিক ভোরের কাগজের প্রথম পাতার শিরোনাম হল, “হারানো বীর প্রতীক তারামন বিবিকে খুঁজে পাওয়া গেছে।” ১৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী তার হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা তুলে দেন।
যুদ্ধোত্তর জীবন তার জন্য সুখকর ছিল না।
অসচ্ছলতা, অবহেলা, সরকারি সহায়তার অভাব-এসবই ছিল তার বাস্তব জীবন।
কিন্তু তবুও তার মুখে ছিল না অভিযোগ। তিনি বলতেন, “দেশ স্বাধীন হইছে—এটাই বড় কথা।”
এই নারী কণ্ঠের সরল বাক্যের ভিতরেই লুকিয়ে আছে এক জাতির মহত্তম মর্যাদা।
১ ডিসেম্বর ২০১৮। বিজয়ের মাসের প্রথম প্রহরে প্রয়াত হলেন তারামন বিবি। তার মৃত্যু যেন ইতিহাসের প্রতীকী দাগ। যেন বিজয়ের মাসেই স্বাধীনতার এক সত্যিকারের আলো নিভে গেলো।
কিন্তু তিনি রয়ে গেলেন ইতিহাসে বাংলাদেশের নারী সংগ্রামের প্রতীক, শক্তির উৎস, লড়াইয়ের প্রতিচ্ছবি হয়ে।
বিজয়ের মাস আমাদের শুধু গৌরবের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় না; আমাদের শেকড়, আমাদের সাহস, আমাদের অস্তিত্বের জন্মমুহূর্তকে নতুন করে চিনতে।

মোঃ রাকিব হাসান