রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়া ইউনিয়নের জোত কাদিরপুর গ্রামের বাসিন্দা মোসাঃ জাহেদা বেগম (৫৫)। যাঁর জীবনের গল্প অন্যরকম এক সংগ্রামের অনুপ্রেরণা। দীর্ঘ এক যুগ ধরে তিনি ব্যাটারি চালিত ভ্যানগাড়ি চালিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। প্রতিদিন সকাল ৭/৮টার দিকে নিজের ভ্যান নিয়ে রাস্তায় নামেন এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত ভাড়ায় চালান। জীবনের চাকা তার হাতে যেন প্রতীকীভাবে ঘুরে চলে – এক চাকা জীবিকার, অন্য চাকা সম্মানের।
জাহেদা বেগমের জীবনের গল্প শুরু হয় ২৫ বছর আগে, মোঃ শাহজামান সরদারের সঙ্গে বিয়ের মাধ্যমে। সংসার জীবন শুরু হয় এক সাধারণ গৃহবধূ হিসেবে। সন্তান-সন্ততি, শ্বশুরবাড়ি—সবকিছুতেই নিজেকে ব্যস্ত রাখেন। কিন্তু জীবনের মোড় ঘুরে যায় যখন অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় স্বামীকে ফেলে ফিরে আসতে হয় বাবার বাড়ি, বাংলাবাজার চরে। জন্ম দেন একমাত্র ছেলে জাহিদুল ইসলামকে।
স্বামী-শ্বশুরবাড়ির তিক্ততা আর সন্তান পালনের তাগিদে এক সময় সিদ্ধান্ত নেন রাস্তায় নামার। চালাতে শুরু করেন চার্জার ভ্যানগাড়ি। সমাজের অনেক চোখরাঙানি, অবজ্ঞা আর অবহেলাকে পেছনে ফেলে, সন্তানের মুখে আহার তুলে দিতে রোদ, বৃষ্টি উপেক্ষা করে চালিয়ে যান জীবনের এই ভ্যান।
বর্তমানে ছেলে জাহিদুল (২৩) একজন দিনমজুর। বিবাহিত এবং তার তিন বছর বয়সী একটি পুত্রসন্তান রয়েছে, নাম জুনাইদ। জাহেদা বেগম এই তিন সদস্যের ছোট পরিবার নিয়েই তার জীবন গড়েছেন।
জাহেদা বেগম বলেন, “প্রতিদিন এই ভ্যান চালিয়ে পাঁচ থেকে ছয়শো টাকা পর্যন্ত আয় করি। এটাই খাবার,বিদ্যুৎ বিল, ঔষধ ইত্যাদিতে খরচ করি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছি।”
তার এলাকার মানুষদের কাছে তিনি সৎ, নির্লোভ, পরিশ্রমী ও ভদ্র হিসেবে পরিচিত। সহযোগী ভ্যান চালকরা জানান, “জাহেদা আপা একজন হাসিখুশি মানুষ। তিনি কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে জীবনযাপন করেন। দুপুরে সামান্য বিস্কুট-পাউরুটি খেয়েই সারাদিন খাটেন। কখনো কারো সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে দেখিনি।”
নারী হয়েও পুরুষদের পাশাপাশি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কর্মজীবনের এই কঠিন পথে চলেছেন জাহেদা। তার এই অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২০ সালে উপজেলা প্রশাসন বাঘাে সহযোগিতায়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তাকে “বিশেষ সম্মাননা স্মারক” প্রদান করা হয়।
জাহেদা বেগম যেন বাঘার এক অনন্য সাহসিনী – যিনি প্রমাণ করেছেন, ইচ্ছাশক্তি আর আত্মবিশ্বাস থাকলে কোনো বাধাই জীবনের গতি থামাতে পারে না। নারী বলেই দুর্বল নয়, বরং সাহস ও সংগ্রামের অপর নামও হতে পারে একজন জাহেদা বেগম।

আবু সাঈদ,বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি