ডাকঘর ও ডাক পিয়ন এই দুটি শব্দ বাংলার ইতিহাস, সাহিত্য ও সমাজের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।
ডাকঘরের সূচনা
উপমহাদেশে ডাক ব্যবস্থার ইতিহাস বহু প্রাচীন। মৌর্য ও গুপ্ত আমলেও বার্তা পরিবহণের জন্য ঘোড়সওয়ার বা দৌড়বিদ ব্যবস্থার প্রমাণ মেলে।
আধুনিক অর্থে ডাকঘরের সূচনা ব্রিটিশ আমলে, মূলত ব্রিটিশ সাম্রাজ্য শাসনের প্রয়োজনে যোগাযোগ রক্ষার জন্য।
১৭৬৬ সালে রবার্ট ক্লাইভ বাংলায় সরকারি ডাক ব্যবস্থা চালু করেন।
১৮৩৭ সালে প্রথম আধুনিক ডাকঘর প্রতিষ্ঠিত হয় কলকাতায়। পরে এটি গোটা বাংলা তথা ভারতবর্ষে বিস্তৃত হয়।
ডাকটিকিট ও খাম
১৮৫৪ সালে ভারতে প্রথম ডাকটিকিট চালু হয়। এটি ছিল “Scinde Dawk” নামে পরিচিত।
খাম ও টিকিট ব্যবস্থার মাধ্যমে সাধারণ মানুষও এই সেবা ব্যবহার করতে পারে।
ডাকপিয়নের প্রধান কাজ ছিল গ্রামেগঞ্জে বা শহরে চিঠি পৌঁছে দেওয়া।
তাঁরা হেঁটে বা সাইকেলে করে চিঠিপত্র, মানি অর্ডার, ছোট পার্সেল ইত্যাদি বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিতেন।
ডাকপিয়ন শুধু চিঠি বহনকারী ছিলেন না, তিনি ছিলেন আশা, দুঃখ, আনন্দ, প্রেম—সব কিছুর বাহক।
গ্রামে একমাত্র বাহ্যিক যোগাযোগের মাধ্যম ছিলেন ডাকপিয়ন। অনেক সময় তাঁরা পড়তে না জানলে গ্রামবাসীরা তাঁকেই বলত চিঠি পড়ে শোনাতে।
তাঁদেরকে অনেক সময় ঘরে বসিয়ে পান-চা খাওয়ানো হত, কারণ চিঠির খবরে প্রিয়জনের সুখ-দুঃখ জড়িয়ে থাকত।- সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে ডাকঘর ও ডাকপিয়ন:
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “ডাকঘর”:
নাটক “ডাকঘর” (১৯১২) একটি প্রতীকধর্মী নাটক, যেখানে ডাকঘর আশা, মুক্তি ও মৃত্যুর প্রতীক।
মূল চরিত্র আমল একটি অসুস্থ শিশু, যে ঘরের ভেতরে বন্দি। সে বাইরে পৃথিবীর কথা জানতে চায়, বিশেষ করে নতুন খুলেছে এমন একটি ডাকঘর থেকে কেউ তার জন্য চিঠি পাঠাবে কি না—এই আশায়।
লোকগীতি ও সিনেমায়:
বাংলার লোকগীতিতে ডাকপিয়ন বারবার এসেছে:
“চিঠি দিলাম ডাক পিয়নে, পড়ে দিও সই জানে…”
বাংলা সিনেমায় বহুবার ডাকপিয়নের চরিত্র দেখা গেছে, যারা প্রেমপত্র কিংবা কোনো দুঃসংবাদ পৌঁছে দেয়।
ডাকঘর ও ডাক পিয়ন শুধু একটি যোগাযোগ ব্যবস্থার অংশ নয়—এরা ছিল বাঙালির আবেগ, স্মৃতি ও সংস্কৃতির অঙ্গ। আজ প্রযুক্তির যুগে ইমেল, মেসেঞ্জার থাকলেও, চিঠির সেই আবেদন আর ডাকপিয়নের সেই প্রতীক্ষা অনেকের মনেই এখনো এক বিশেষ জায়গা দখল করে আছে।
ডাকঘর ডাক পিয়ন দুটো শব্দের মাঝে আমি নিজের অনেকটাই মিল খুঁজে পাই,
সারাদিন কর্ম ব্যস্ততার পরে রানার যেভাবে ছুটতো কাঁদে চিঠির বোঝা নিয়ে তেমনি আমরাও যারা গণমাধ্যম কর্মী আছে তারাও ছুটে চলি ব্যাগ ভর্তি ডাকঘর ডাক পিয়ন কিছু নেই।

রুবিনা শেখ