
ঐতিহ্যবাহী জশনে জুলুস উপলক্ষে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত মহাসমাবেশে মাইজভান্ডার দরবার শরীফের সাজ্জাদানশিন সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারী বলেছেন, “১৯৭১ সালে অসংখ্য শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। ২০২৪ সালে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে একটি গণআন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, সেই আন্দোলনের সফলতা আমরা দেখতে পাচ্ছি না।”
শনিবার দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে জশনে জুলুসের বর্ণাঢ্য র্যালি শেষে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারী বলেন—“আমরা অন্য ধর্মকে সম্মান করে নিজের ধর্মের মর্যাদা বৃদ্ধি করতে পারি। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আজ হিংস্রতা, উগ্রতা ও দয়ামায়াহীনতা এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে যে সমাজ থেকে মানবতা প্রায় বিলুপ্ত।”
“ঈদে মিলাদুন্নবী মাসব্যাপী পালন করার মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষের মাঝে দয়া, মায়া ও এহসান প্রতিষ্ঠা করা। অথচ কিছু মানুষ জ্বালাও-পোড়াও ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে।”
“১৯৭১ সালের মতো ২০২৪ সালের আন্দোলন থেকেও গণতন্ত্রের সুফল আমরা দেখতে পাইনি। শহীদ, আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য দোয়া করছি। আজ দেশে ভয়ের সন্ত্রাস সৃষ্টি করা হয়েছে, এভাবে কোনো দেশ চলতে পারে না।”
“ঈদে মিলাদুন্নবী নিয়ে যারা ষড়যন্ত্র করছে, বিদআত বিদআত বলে বিভাজন সৃষ্টি করছে, তাদের বলি— আসুন সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করি। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে আমরা এ আয়োজন করছি, তিনি যেন আমাদের কবুল করেন।”
অন্যান্য বক্তাদের মতামত : কবি ও দার্শনিক ফরহাদ মজহার বলেন, “জুলাই আন্দোলনের পর আমরা যে দেশ প্রত্যাশা করেছিলাম, তা হয়নি। রাসূল (সা.)-এর রাজনীতি হলো সত্যিকারের গণঅভ্যুত্থান। তিনি মক্কা বিজয় করেছেন অহংকার, হিংসা ও জুলুমের বিরুদ্ধে। আমরাও সেই জুলুমের বিরুদ্ধে দাঁড়াবো।”
মাশুকে মইনুদ্দীন আহমেদ আল মাইজভান্ডারী বলেন, “বর্তমান সমাজে যে বর্বরতা চলছে, তা কোনোভাবেই নবীর উম্মত হয়ে করা সম্ভব নয়। আমাদের ওপর পরীক্ষা এলে বেশি বেশি দুরুদ পড়তে হবে। রাসূলের জীবনের আলো আমাদের জীবনকে আলোকিত করুক।”
সুন্নি ইসলামি বক্তা গিয়াসউদ্দিন তাহেরি অভিযোগ করে বলেন, “জুলাই আন্দোলনের পর থেকে খানকা, রাজপথ, অফিস কোথাও আমরা নিরাপদ নই। গত এক বছরে ৬৯টি খানকা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টাকে আহ্বান জানাই, এ হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিন।”
তিনি আরও যোগ করেন, “সাইফুদ্দীন মাইজভান্ডারী যে কোনো অবস্থায় ডাক দিলে সাড়ে বারো হাজার খানকার আশেকান ও মুরিদান রাজপথে নামতে প্রস্তুত।”
আ ক ম মাসুদ বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধৈর্য ধরেছি। এখন আর ধৈর্যের সময় নেই। আঘাত এলে পাল্টা আঘাত দিতে হবে। আর কোনো আঘাত বিনা প্রতিরোধে ছেড়ে দেওয়া যাবে না।”
সমাবেশের সমাপ্তি -ড. সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারীর বিশেষ মোনাজাতে ফিলিস্তিনসহ বিশ্বশান্তি কামনা করা হয়।
মাওলানা বাকি বিল্লাহ আল আজহারীর সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন— আব্দুল্লাহ আল মারুফ, আ ন ম মাসুদ হোসাইন আল কাদেরী, গোলাম মহিউদ্দিন লতিফী, কাজী মো. মোহসীন চৌধুরী প্রমুখ।
বর্ণাঢ্য র্যালি, আধ্যাত্মিক আলোচনাসভা ও একাত্মতার শপথের মধ্য দিয়ে ঈদে মিলাদুন্নবীর জশনে জুলুস সফলভাবে সম্পন্ন হয়।