প্রিন্ট এর তারিখঃ বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ১ কার্তিক ১৪৩২

সঞ্চয় করবেন যেভাবে

ইউ বি টিভি ডেস্ক

একদিন দুই বন্ধু—রাহুল ও জুবায়ের—একসাথে চাকরিতে যোগ দিলো। দুজনেই সমান বেতন পেতো, সমান বয়স, সমান স্বপ্ন।

৫ বছর পর দেখা গেল, রাহুল ব্যাংক ব্যালান্সে ৩ লাখ টাকা জমিয়েছে, ডিপিএস চলছে, কিছু ইনভেস্টও করেছে। আর জুবায়ের? সব টাকা খরচ, কিছুই হাতে নেই। অসুস্থতায় ধার করে চলতে হচ্ছে।

রাহুল বলল, “বন্ধু, আয় যতই হোক না কেন, যদি অভ্যাস না বদলাও—সঞ্চয় হবে না।”

এই গল্পটা আজ আমাদের সবার বাস্তব চিত্র। এখনই যদি ব্যবস্থা না নিই, ভবিষ্যৎ শুধু কষ্ট আর অনিশ্চয়তায় ডুবে যাবে।

তাই উপায় হলো সঞ্চয় করা।

কিন্তু কিভাবে সঞ্চয় করবেন সেটারই কিছু টিপস এখানে দেয়া হলো-

১. লক্ষ্য ঠিক করুন – কেন সঞ্চয় করবেন?

আপনার কি ভবিষ্যতে একটি বাড়ি দরকার? সন্তানদের জন্য শিক্ষা? জরুরি চিকিৎসা? নাকি একটু নিশ্চিন্ত জীবন? এই লক্ষ্য থাকলে সঞ্চয় হবে অর্থবহ। কারণ, “যার লক্ষ্য নেই, তার সঞ্চয়ও নেই।”

২. আগে সঞ্চয়, পরে খরচ” নিয়মে চলুন:

বেতন পেলেই প্রথমেই একটা নির্দিষ্ট অংশ (ধরুন ১৫%) আলাদা করে রাখুন সঞ্চয়ের জন্য। বাকি দিয়ে খরচ করুন। উল্টোটা করলে কিছুই থাকবে না।

৩. অপ্রয়োজনীয় খরচ কেটে ফেলুন:

প্রতিদিনের অর্ডার করা খাবার, অব্যবহৃত সাবস্ক্রিপশন, অহেতুক কেনাকাটা—এই খরচগুলো আস্তে আস্তে আপনাকে দেউলিয়া করে ফেলে। কারণ, প্রয়োজন নয়, লোভই বেশিরভাগ খরচের কারণ।”

৪. জরুরি তহবিল তৈরি করুন (Emergency Fund):

জীবনে হঠাৎ অসুস্থতা, চাকরি হারানো বা কোনো বিপদ এলেই এই ফান্ড হবে আপনার নিরাপত্তা। অন্তত ৩-৬ মাসের খরচ জমিয়ে রাখুন।

৫. ডিপিএস/সঞ্চয়পত্র চালু করুন:

এই প্ল্যানগুলো সঞ্চয়কে নিয়মিত রাখে। মাসে অল্প অল্প করে জমিয়ে রাখলে একদিন তা বড় হয়ে দাঁড়ায়। কারণ, ধৈর্যের সঞ্চয়ই বড় ফল দেয়।

৬. খরচের হিসাব রাখুন – টাকা কোথায় যাচ্ছে?

একটা খাতা বা অ্যাপ ব্যবহার করুন। প্রতিদিন কত টাকা কোথায় খরচ করছেন তা লিখে রাখলে মনের অজান্তে অপচয় কমে যাবে।

৭. ক্যাশলেস অভ্যাস গড়ুন – কিন্তু সীমা মেনে:

কার্ড বা মোবাইল পেমেন্ট অনেক সুবিধাজনক, কিন্তু সাথে লোভের ফাঁদও। তাই ডিজিটাল ব্যবহার করুন, কিন্তু সীমাবদ্ধ বাজেটের মধ্যে।

৮. ছোট ছোট লক্ষ্য ঠিক করুন:

প্রথমে ৫০০ টাকা, তারপর ১০০০, এরপর ২০০০… এভাবে বাড়িয়ে নিন। সঞ্চয় কখনো হঠাৎ বড় হয় না—ধীরে ধীরে অভ্যাস গড়ে তুলতে হয়।

৯. বাড়তি আয়ের পথ খুঁজুন এবং তা সঞ্চয় করুন:

ফ্রিল্যান্সিং, পার্টটাইম, অনলাইন সেল—এই বাড়তি আয় পুরোপুরি সঞ্চয়ে রাখতে পারেন। এতে আপনার মূল আয় চাপমুক্ত থাকবে।

১০. নিজেকে মাঝে মাঝে পুরস্কার দিন, কিন্তু সঞ্চয়ের ক্ষতি নয়:

সঞ্চয় মানে সব আনন্দ ছেড়ে দেয়া নয়। একটি নির্দিষ্ট বাজেট রেখে মাঝে মাঝে নিজের জন্য ছোট আনন্দ রাখুন—এতে অভ্যাস ভাঙে না।

সব শেষ কথা কথা হলো, জীবনের প্রতিটি ধাপেই টাকা দরকার। কিন্তু টাকা শুধু আয় করলেই হবে না, সঞ্চয় করাই আসল বুদ্ধিমত্তা। যিনি কম আয় করেও সঞ্চয় করতে পারেন, তিনি সত্যিকারের নিরাপদ মানুষ। কারণ, “ভবিষ্যতের জন্য যিনি আজ থেকেই ভাবেন, তিনিই আগামীতে সবচেয়ে নিশ্চিন্ত থাকেন।”

প্রতিষ্ঠাতা, ক্যাপশন নিউজ এবং ভিডিও এডিটরঃ মো: রাজিবুল করিম রোমিও, এম, এস, এস (সমাজ কর্ম-রাজশাহী), প্রধান উপদেষ্টাঃ মো: সাদেকুল ইসলাম (কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, সংগঠক), প্রকাশকঃ কামরুন নেছা তানিয়া, সম্পাদকঃ রুবিনা শেখ, নির্বাহী সম্পাদকঃ অঞ্জনা চৌধুরী

প্রিন্ট করুন