
মঙ্গল গ্রহ নিয়ে মানুষের কৌতূহলের কমতি নেই। বেশ কয়েক শতাব্দী ধরেই আমাদের কল্পনাকে ধারণ করে রেখেছে এই মঙ্গল পাথরের গ্রহ। দীর্ঘদিন ধরেই গ্রহটিতে জীবন ধারণ করা সম্ভব কি না, সে বিষয় নিয়ে চলছে বিস্তর গবেষণা। মঙ্গল গ্রহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অনুসন্ধানে প্রায়ই উঠে এসেছে, এক সময় গ্রহটিতে বিশাল পরিমাণ পানি থাকলেও এখন আর এর অস্তিত্ব নেই।
পৃথিবীতে যেমন প্রাণীজগৎ রয়েছে, প্রায় একই রকম গ্রহ হওয়া সত্ত্বেও কেন মঙ্গল অনুর্বর এবং বসবাসের অযোগ্য— এ সব প্রশ্নই এতো দিন ভাবিয়েছে বিজ্ঞানীদের। তবে এবার মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্বের প্রশ্নকে আরও একবার উস্কে দিল নতুন গবেষণা।
আজ থেকে কয়েক লাখ বছর আগে মঙ্গলে প্রাণ ছিল কি না, তা খুঁজতে দিনরাত কাজ করে চলেছে একাধিক রোভার। নাসার এক ‘কিউরিয়োসিটি’ রোভার সম্প্রতি এমন একটি সূত্র খুঁজে পেয়েছে, যা এই প্রশ্নের জবাবের একটি সম্ভাব্য দিক উন্মোচন করেছে।
কিউরিয়োসিটির পাঠানো তথ্য বলছে, মঙ্গল গ্রহে একসময় বিক্ষিপ্তভাবে প্রবাহিত নদীনালা থাকলেও আদতে কী এ গ্রহের মরুভূমি হওয়ার কথা ছিল? নতুন গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, এর নেপথ্য কারণ হল কার্বনেট খনিজে সমৃদ্ধ শিলা!
চলতি মাসে ‘নেচার’ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রটিতে বলা হয়েছে, এই কার্বনেট জাতীয় শিলা (যেমন পৃথিবীর চুনাপাথর) মূলত বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে পাথরের স্তরে আটকে রাখে। এই শিলাগুলোর অস্তিত্ব থেকেই মঙ্গল গ্রহের অতীত সম্পর্কে ধারণা করা যায়।
নতুন এই গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক তথা নাসার কিউরিয়োসিটি দলের সদস্য এডউইন কাইট।
সংবাদসংস্থা এএফপিকে কাইট বলেন, ‘হয়তো মঙ্গল গ্রহের কোনো কোনো অংশে কিছু সময়ের জন্য প্রাণের অনুকূল পরিবেশ ছিল। তবে সেগুলো ব্যতিক্রম।’ এমনিতে মঙ্গল গ্রহে প্রাণের জন্য প্রয়োজনীয় মোটামুটি সব উপাদানই রয়েছে, কেবলমাত্র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদানটি ছাড়া— জল! তবে লাল এ গ্রহের বুকে নানা জায়গায় বড় বড় গর্ত এবং খাত দেখে অনুমান করা হয়, অতীতে কোনো একসময় মঙ্গলে নদী ও হ্রদ ছিল!
তবে কেন একে ‘ব্যতিক্রম’ বলছেন বিজ্ঞানীরা? তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন কাইট। তিনি বলেন, পৃথিবীর ক্ষেত্রে বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহকে উষ্ণ রাখে। যুগ যুগ ধরে এই কার্বন ডাই-অক্সাইড কার্বনেট জাতীয় শিলাস্তরে আটকে যায়। তারপর আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের সময় গ্যাসটি আবার বায়ুমণ্ডলে ফিরে যায়। এই সুষম কার্বনচক্র বহমান জলেরও সহায়ক। ২০২১ সালে নাসার ‘পার্সিভারেন্স’ রোভারও মঙ্গল গ্রহে শুকিয়ে যাওয়া হ্রদের ধারে কার্বনেটের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছিল।
তবে কাইট বলছেন, পৃথিবীর তুলনায় মঙ্গলে অগ্ন্যুৎপাতের সংখ্যা কম। এর ফলে মঙ্গল গ্রহের পরিবেশে কার্বনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়েছে। আর সে কারণেই মঙ্গল অনেক ঠান্ডা এবং বসবাসের অযোগ্য।
তবে নতুন গবেষণায় জানা গেছে, কোটি কোটি বছর আগে মঙ্গলে কম সময়ের জন্য পানি ছিল। কিন্তু তা শেষ হয়ে যায়। তারপর প্রায় ১০ কোটি বছর ধরেই মঙ্গল গ্রহ অনুর্বর মরুভূমি হয়ে রয়েছে। এতো দীর্ঘ সময় ধরে প্রতিকূল পরিবেশে কোনো কিছুর পক্ষেই বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।
তবে কাইট বলছেন, মঙ্গল গ্রহের গভীর ভূস্তরে এখনও জল থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আমরা এখনও পর্যন্ত তা খুঁজে পাইনি। আপাতত মঙ্গলে কার্বনেটের আরও প্রমাণ খোঁজার চেষ্টায় রয়েছেন বিজ্ঞানীরা। মঙ্গলের পৃষ্ঠ থেকে পৃথিবীতে পাথরের নমুনা পাঠানো গেলেই এ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা করা যাবে।