ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার এমপিওভুক্ত খান্দুরা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম, স্বাক্ষর জালিয়াতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে মাদ্রাসার সাবেক শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করে তাঁর পদত্যাগ দাবি করেছেন।
অভিযোগকারীরা এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগও জমা দিয়েছেন।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, গত তিন বছরে মাদ্রাসার বাজেটভুক্ত কোনো উন্নয়ন বা মেরামত কাজ হয়নি। তহবিল থেকে বড় অঙ্কের টাকা উত্তোলন করা হলেও তার কোনো হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না। ভর্তির টাকা, মাঠ সংস্কার ব্যয়, ক্রীড়া সামগ্রী ক্রয়সহ বিভিন্ন খাতে অর্থ লেনদেনে স্বচ্ছতা নেই। নতুন শিক্ষকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নেওয়া এবং বদলি–নিয়োগে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগও তোলা হয়েছে। অভিযোগকারীরা আরো বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ ম্যানেজিং কমিটির নাম ব্যবহার করে কোনো বৈধ সভা ছাড়াই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন সুপার। স্বাক্ষর জালিয়াতি করে অর্থ আত্মসাৎ এবং ফান্ডের টাকা এককভাবে ব্যয় করাও তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের অংশ।
এ ছাড়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীর ও অভিভাবকসহ একাধিক নারীর সঙ্গে সুপারের অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ এবং এসব সম্পর্কের কিছু ছবি স্থানীয়ভাবে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। শিক্ষকদের দাবি, এসব কর্মকাণ্ডে প্রতিষ্ঠানের সুনাম মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে। পাশাপাশি সুপারের অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলা, শিক্ষক–কর্মচারীদের মানসিকভাবে নির্যাতন ও অপমান করার অভিযোগও রয়েছে।
অভিযোগকারীরা জানান, এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতার প্রভাব ব্যবহার করে তাঁদের উপর ভীতি ও চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এতে মাদ্রাসার স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হয়েছে এবং শিক্ষক–শিক্ষার্থী উভয়েই উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন।
অভিযুক্ত সুপার জহিরুল ইসলাম তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “এগুলো এক ধরনের ষড়যন্ত্র। কোনো অভিযোগের প্রমাণ নেই। কারো কোনো সমস্যা থাকলে বসেই সমাধান করে দেব।” তবে নারী কেলেঙ্কারির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অসুস্থতার কথা বলে কোনো মন্তব্য করেননি।
এ বিষয়ে নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা নাসরিন বলেন, “তাকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু অসুস্থতার কথা বলে তিনি আসেননি। অভিযোগগুলো গুরুতর। বিষয়টি খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঘটনাটি বর্তমানে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা–সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের দাবি—যত দ্রুত সম্ভব স্বচ্ছ তদন্ত করে সত্য উদ্ঘাটন এবং অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হোক।
