রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

অগ্নিঝরা বিজয়ের মাসে ফিরে দেখা 

বঙ্গনারীর অগ্নিজন্ম, মুক্তির রণতরী, বীরকন্যা বীর প্রতীক তারামন বিবির অমর সাহস

ডেস্ক নিউজ
ডেস্ক নিউজ প্রকাশিত: সোমবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১:৫০ পিএম | 55 বার পড়া হয়েছে
বঙ্গনারীর অগ্নিজন্ম, মুক্তির রণতরী, বীরকন্যা বীর প্রতীক তারামন বিবির অমর সাহস

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে কিছু চরিত্র আছেন, যাদের জীবন যেন একটি প্রতীকের নাম। নিপীড়নের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো, অসম সাহস, অটল দেশপ্রেম এবং মানবিক শক্তির এক বিরল সম্মিলন-মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবি (বীর প্রতীক) সেইসব বিরল চরিত্রদের একজন। তিনি বাংলাদেশের নারী শক্তির গোপন ও মহিমান্বিত ইতিহাস।

মাত্র ১৩ বছরের কিশোরী, অথচ একসময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে বিভ্রান্ত করে, অস্ত্র হাতে সম্মুখযুদ্ধে লড়ে, গুপ্তচর সেজে শত্রু শিবিরের অন্তঃস্থলে প্রবেশ করে, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য জীবনবাজি রেখে তথ্য এনে দিয়েছেন-এমন এক কিংবদন্তী নারী আমাদের ইতিহাসে আর কেউ নন, তারামন বিবি।

তারামন বিবির জন্ম ১৯৫৭ সালে কুড়িগ্রাম জেলার চর রাজিবপুর উপজেলার কোদালকাটি ইউনিয়নের শংকর মাধবপুর গ্রামে। চরাঞ্চলের অসহায় বাস্তবতা, ভাঙন, নদী, তীব্র দারিদ্র্য-এসবই ছিল তার শৈশবের পরিবেশ। তার আসল নাম ছিল তারাবানু।

ছোটবেলা থেকেই শ্রমসাধ্য জীবনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠা এ কিশোরীর ছিল তীক্ষ্ণ বুদ্ধি, ক্ষিপ্রতা আর এক অদ্ভুত দৃঢ় মানসিকতা। এই কিশোরীটি জানত না, খুব শীঘ্রই তার জীবনধারাই বদলে যাবে, তিনি হয়ে উঠবেন মুক্তিযুদ্ধের এক জীবন্ত গল্প।

সাল ১৯৭১। উত্তাল সময়। মাত্র ১৩ বছরের তারাবানুর গ্রাম হয়ে ওঠে যুদ্ধের আবর্ত। গ্রামে পাকিস্তানি সৈন্য নেমছে, চারদিকে আতঙ্ক, লুটপাট। তার গ্রাম পড়েছিল ১১ নম্বর সেক্টরের অধীনে, যার নেতৃত্বে ছিলেন সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল আবু তাহের।

একদিন মুক্তিযোদ্ধা মুহিব হাবিলদার তাদের বাড়িতে এসে জানালেন-ক্যাম্পে রান্না, ধোয়া-মোছার জন্য একজন মেয়ে দরকার। তারাবানুর মা প্রথমে রাজি হননি; যুদ্ধের আগুনে মেয়েকে পাঠানো কি সহজ কথা? কিন্তু মুহিব হাবিলদারের আশ্বাস “ও আমার ধর্ম মেয়ে। সব দায়িত্ব আমার।” অবশেষে মায়ের মন গলল।

সেই মুহূর্ত থেকেই শুরু তারাবানুর নতুন যাত্রা। ক্যাম্পেই তার নামের শেষে যোগ হয়-তারামন।

ক্যাম্পে তিনি রান্না করতেন, কাপড় ধুতেন, অস্ত্র পরিষ্কার করতেন। কিন্তু এগুলোই তার শেষ কাজ ছিল না। তাঁর চোখের দীপ্তিতে মুহিব হাবিলদার বুঝতে পারলেন-এই কিশোরী শুধু কাজ করতে আসেনি, লড়তে এসেছে।

মুহিব হাবিলদার প্রথমে অবাক হলেও পরে তাকে রাইফেল শেখান। যেহেতু তিনি ছিলেন অল্পবয়সী ও শারীরিকভাবে ক্ষুদ্রকায়, তাই তাকে স্টেনগানও ব্যবহার করতে শেখানো হয়। দু’হাতে আগুন হয়ে ওঠা ১৩ বছরের কিশোরীটি খুব দ্রুত অস্ত্র ব্যবহারে পারদর্শী হয়ে ওঠেন। তার পর থেকেই তিনি আর কেবল ক্যাম্পের কন্যাই নয়, তিনি হয়ে উঠলেন একজন যোদ্ধা।

উত্তাল সেই দিন গুলোর মধ্যে কোনো একদিন মধ্যাহ্নভোজের সময় ক্যাম্পের সবাই যখন খেতে ব্যস্ত, তারামন নজর রাখছিলেন চারপাশে। সুপারি গাছে উঠে তিনি দেখলেন, পাকিস্তানিদের গানবোট দ্রুতগতিতে আসছে। তার সতর্কবার্তায় মুক্তিবাহিনী মুহূর্তেই অবস্থান নেয়, ঘণ্টার পর ঘণ্টা যুদ্ধ চলে। অন্যথায় সেই ক্যাম্পের সব মুক্তিযোদ্ধাই হয়তো সেদিন বেঁচে ফিরতেন না। এটা ছিল তারামন বিবির প্রথম বড় যুদ্ধ-অবদান।

 

তারামনের সবচেয়ে দুর্ধর্ষ ভূমিকা ছিল গুপ্তচর হিসেবে। তিনি কখনো-চুলে জট বাঁধা পাগলি, কখনো কাদা মাখা পথনারী, কখনো অঙ্গহানি হওয়া ভিখারিনীর অভিনয়ে পাকিস্তানি শিবিরে ঢুকে পড়তেন। হানাদাররা মনে করত-পাগল নারী ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা হাসত, অপমান করত, তিরস্কার করত। কিন্তু তাদের অগোচরে কিশোরী তারামন নিশ্চুপে পর্যবেক্ষণ করতেন শিবিরের প্রতিটি কোণ, অস্ত্রের অবস্থান, সৈন্যদের চলন-বলন, প্রতিরক্ষা দুর্বলতা।

তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বহু সফল অপারেশন পরিচালনা করে মুক্তিবাহিনী। মৃত্যুকে তুচ্ছ করে কিশোরীর এমন বুদ্ধিমত্তা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক অনন্য বিস্ময়।

১৯৭১ সালের অক্টোবর। দু’পাড়ের (খালিয়াডাঙ্গা-ভেলামারী) মাঝখানে খাল, এক পাশে মুক্তিযোদ্ধা, অন্য পাশে পাকিস্তানি সেনারা। এই সময়েই তারামন কাদা মাখা ‘পাগলী’ সেজে ঢুকে গেলেন সেনা ক্যাম্পে। দুরন্ত অভিনয় আর প্রবল বুদ্ধিমত্তায় তিনি ক্যাম্পের প্রতিটি রক্ষাব্যূহ বুঝে নিলেন। ফিরে এসে জানালেন, “কোথায় আক্রমণ করলে সবচেয়ে ভয়ংকর ক্ষতি হবে।”

এই তথ্যের উপর ভিত্তি করে পরদিনই হয় এক সফল আক্রমণ। এক কিশোরী সামলাতে পেরেছিল একটি অপারেশনের কৌশলগত মেরুদণ্ড-যা আজও বিস্ময়েরই নাম।

১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করে। কিন্তু বেদনাদায়ক বাস্তবতা তিনি নিজেই জানতেন না যে তিনি একজন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা!

চরাঞ্চলের দারিদ্র্য, সামাজিক অস্থিরতা, অজ্ঞাতেই দিন কেটেছে তার। বিয়ের পর তাঁর স্বামী আব্দুল মজিদও জানতেন না যে তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। স্বামী এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “হ্যায় যে মুক্তিযোদ্ধা-হেইটা বিয়ের পরও বুঝি নাই।” ১৯৯৫ সালে অধ্যাপক বিমল কান্তি দে, আবদুস সবুর ফারুকী ও সোলায়মান আলীর গবেষণা ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে তাকে পুনরায় বাংলাদেশ জানল।

২১ নভেম্বর ১৯৯৫। দৈনিক ভোরের কাগজের প্রথম পাতার শিরোনাম হল, “হারানো বীর প্রতীক তারামন বিবিকে খুঁজে পাওয়া গেছে।” ১৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী তার হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা তুলে দেন।

যুদ্ধোত্তর জীবন তার জন্য সুখকর ছিল না।

অসচ্ছলতা, অবহেলা, সরকারি সহায়তার অভাব-এসবই ছিল তার বাস্তব জীবন।

কিন্তু তবুও তার মুখে ছিল না অভিযোগ। তিনি বলতেন, “দেশ স্বাধীন হইছে—এটাই বড় কথা।”

এই নারী কণ্ঠের সরল বাক্যের ভিতরেই লুকিয়ে আছে এক জাতির মহত্তম মর্যাদা।

১ ডিসেম্বর ২০১৮। বিজয়ের মাসের প্রথম প্রহরে প্রয়াত হলেন তারামন বিবি। তার মৃত্যু যেন ইতিহাসের প্রতীকী দাগ। যেন বিজয়ের মাসেই স্বাধীনতার এক সত্যিকারের আলো নিভে গেলো।

কিন্তু তিনি রয়ে গেলেন ইতিহাসে বাংলাদেশের নারী সংগ্রামের প্রতীক, শক্তির উৎস, লড়াইয়ের প্রতিচ্ছবি হয়ে।

বিজয়ের মাস আমাদের শুধু গৌরবের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় না; আমাদের শেকড়, আমাদের সাহস, আমাদের অস্তিত্বের জন্মমুহূর্তকে নতুন করে চিনতে
Hrs Rakib
মোঃ রাকিব হাসান

কুড়িগ্রাম (রাজিবপুর) প্রতিনিধি

অগ্নিঝরা বিজয়ের মাসে ফিরে দেখা বঙ্গনারীর অগ্নিজন্ম, মুক্তির রণতরী, বীরকন্যা বীর প্রতীক তারামন বিবির অমর সাহস

 

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে কিছু চরিত্র আছেন, যাদের জীবন যেন একটি প্রতীকের নাম। নিপীড়নের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো, অসম সাহস, অটল দেশপ্রেম এবং মানবিক শক্তির এক বিরল সম্মিলন-মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবি (বীর প্রতীক) সেইসব বিরল চরিত্রদের একজন। তিনি বাংলাদেশের নারী শক্তির গোপন ও মহিমান্বিত ইতিহাস।

মাত্র ১৩ বছরের কিশোরী, অথচ একসময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে বিভ্রান্ত করে, অস্ত্র হাতে সম্মুখযুদ্ধে লড়ে, গুপ্তচর সেজে শত্রু শিবিরের অন্তঃস্থলে প্রবেশ করে, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য জীবনবাজি রেখে তথ্য এনে দিয়েছেন-এমন এক কিংবদন্তী নারী আমাদের ইতিহাসে আর কেউ নন, তারামন বিবি।

তারামন বিবির জন্ম ১৯৫৭ সালে কুড়িগ্রাম জেলার চর রাজিবপুর উপজেলার কোদালকাটি ইউনিয়নের শংকর মাধবপুর গ্রামে। চরাঞ্চলের অসহায় বাস্তবতা, ভাঙন, নদী, তীব্র দারিদ্র্য-এসবই ছিল তার শৈশবের পরিবেশ। তার আসল নাম ছিল তারাবানু।

ছোটবেলা থেকেই শ্রমসাধ্য জীবনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠা এ কিশোরীর ছিল তীক্ষ্ণ বুদ্ধি, ক্ষিপ্রতা আর এক অদ্ভুত দৃঢ় মানসিকতা। এই কিশোরীটি জানত না, খুব শীঘ্রই তার জীবনধারাই বদলে যাবে, তিনি হয়ে উঠবেন মুক্তিযুদ্ধের এক জীবন্ত গল্প।

সাল ১৯৭১। উত্তাল সময়। মাত্র ১৩ বছরের তারাবানুর গ্রাম হয়ে ওঠে যুদ্ধের আবর্ত। গ্রামে পাকিস্তানি সৈন্য নেমছে, চারদিকে আতঙ্ক, লুটপাট। তার গ্রাম পড়েছিল ১১ নম্বর সেক্টরের অধীনে, যার নেতৃত্বে ছিলেন সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল আবু তাহের।

একদিন মুক্তিযোদ্ধা মুহিব হাবিলদার তাদের বাড়িতে এসে জানালেন-ক্যাম্পে রান্না, ধোয়া-মোছার জন্য একজন মেয়ে দরকার। তারাবানুর মা প্রথমে রাজি হননি; যুদ্ধের আগুনে মেয়েকে পাঠানো কি সহজ কথা? কিন্তু মুহিব হাবিলদারের আশ্বাস “ও আমার ধর্ম মেয়ে। সব দায়িত্ব আমার।” অবশেষে মায়ের মন গলল।

সেই মুহূর্ত থেকেই শুরু তারাবানুর নতুন যাত্রা। ক্যাম্পেই তার নামের শেষে যোগ হয়-তারামন।

ক্যাম্পে তিনি রান্না করতেন, কাপড় ধুতেন, অস্ত্র পরিষ্কার করতেন। কিন্তু এগুলোই তার শেষ কাজ ছিল না। তাঁর চোখের দীপ্তিতে মুহিব হাবিলদার বুঝতে পারলেন-এই কিশোরী শুধু কাজ করতে আসেনি, লড়তে এসেছে।

মুহিব হাবিলদার প্রথমে অবাক হলেও পরে তাকে রাইফেল শেখান। যেহেতু তিনি ছিলেন অল্পবয়সী ও শারীরিকভাবে ক্ষুদ্রকায়, তাই তাকে স্টেনগানও ব্যবহার করতে শেখানো হয়। দু’হাতে আগুন হয়ে ওঠা ১৩ বছরের কিশোরীটি খুব দ্রুত অস্ত্র ব্যবহারে পারদর্শী হয়ে ওঠেন। তার পর থেকেই তিনি আর কেবল ক্যাম্পের কন্যাই নয়, তিনি হয়ে উঠলেন একজন যোদ্ধা।

উত্তাল সেই দিন গুলোর মধ্যে কোনো একদিন মধ্যাহ্নভোজের সময় ক্যাম্পের সবাই যখন খেতে ব্যস্ত, তারামন নজর রাখছিলেন চারপাশে। সুপারি গাছে উঠে তিনি দেখলেন, পাকিস্তানিদের গানবোট দ্রুতগতিতে আসছে। তার সতর্কবার্তায় মুক্তিবাহিনী মুহূর্তেই অবস্থান নেয়, ঘণ্টার পর ঘণ্টা যুদ্ধ চলে। অন্যথায় সেই ক্যাম্পের সব মুক্তিযোদ্ধাই হয়তো সেদিন বেঁচে ফিরতেন না। এটা ছিল তারামন বিবির প্রথম বড় যুদ্ধ-অবদান।

 

তারামনের সবচেয়ে দুর্ধর্ষ ভূমিকা ছিল গুপ্তচর হিসেবে। তিনি কখনো-চুলে জট বাঁধা পাগলি, কখনো কাদা মাখা পথনারী, কখনো অঙ্গহানি হওয়া ভিখারিনীর অভিনয়ে পাকিস্তানি শিবিরে ঢুকে পড়তেন। হানাদাররা মনে করত-পাগল নারী ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা হাসত, অপমান করত, তিরস্কার করত। কিন্তু তাদের অগোচরে কিশোরী তারামন নিশ্চুপে পর্যবেক্ষণ করতেন শিবিরের প্রতিটি কোণ, অস্ত্রের অবস্থান, সৈন্যদের চলন-বলন, প্রতিরক্ষা দুর্বলতা।

তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বহু সফল অপারেশন পরিচালনা করে মুক্তিবাহিনী। মৃত্যুকে তুচ্ছ করে কিশোরীর এমন বুদ্ধিমত্তা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক অনন্য বিস্ময়।

১৯৭১ সালের অক্টোবর। দু’পাড়ের (খালিয়াডাঙ্গা-ভেলামারী) মাঝখানে খাল, এক পাশে মুক্তিযোদ্ধা, অন্য পাশে পাকিস্তানি সেনারা। এই সময়েই তারামন কাদা মাখা ‘পাগলী’ সেজে ঢুকে গেলেন সেনা ক্যাম্পে। দুরন্ত অভিনয় আর প্রবল বুদ্ধিমত্তায় তিনি ক্যাম্পের প্রতিটি রক্ষাব্যূহ বুঝে নিলেন। ফিরে এসে জানালেন, “কোথায় আক্রমণ করলে সবচেয়ে ভয়ংকর ক্ষতি হবে।”

এই তথ্যের উপর ভিত্তি করে পরদিনই হয় এক সফল আক্রমণ। এক কিশোরী সামলাতে পেরেছিল একটি অপারেশনের কৌশলগত মেরুদণ্ড-যা আজও বিস্ময়েরই নাম।

১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করে। কিন্তু বেদনাদায়ক বাস্তবতা তিনি নিজেই জানতেন না যে তিনি একজন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা!

চরাঞ্চলের দারিদ্র্য, সামাজিক অস্থিরতা, অজ্ঞাতেই দিন কেটেছে তার। বিয়ের পর তাঁর স্বামী আব্দুল মজিদও জানতেন না যে তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। স্বামী এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “হ্যায় যে মুক্তিযোদ্ধা-হেইটা বিয়ের পরও বুঝি নাই।” ১৯৯৫ সালে অধ্যাপক বিমল কান্তি দে, আবদুস সবুর ফারুকী ও সোলায়মান আলীর গবেষণা ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে তাকে পুনরায় বাংলাদেশ জানল।

২১ নভেম্বর ১৯৯৫। দৈনিক ভোরের কাগজের প্রথম পাতার শিরোনাম হল, “হারানো বীর প্রতীক তারামন বিবিকে খুঁজে পাওয়া গেছে।” ১৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী তার হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা তুলে দেন।

যুদ্ধোত্তর জীবন তার জন্য সুখকর ছিল না।

অসচ্ছলতা, অবহেলা, সরকারি সহায়তার অভাব-এসবই ছিল তার বাস্তব জীবন।

কিন্তু তবুও তার মুখে ছিল না অভিযোগ। তিনি বলতেন, “দেশ স্বাধীন হইছে—এটাই বড় কথা।”

এই নারী কণ্ঠের সরল বাক্যের ভিতরেই লুকিয়ে আছে এক জাতির মহত্তম মর্যাদা।

১ ডিসেম্বর ২০১৮। বিজয়ের মাসের প্রথম প্রহরে প্রয়াত হলেন তারামন বিবি। তার মৃত্যু যেন ইতিহাসের প্রতীকী দাগ। যেন বিজয়ের মাসেই স্বাধীনতার এক সত্যিকারের আলো নিভে গেলো।

কিন্তু তিনি রয়ে গেলেন ইতিহাসে বাংলাদেশের নারী সংগ্রামের প্রতীক, শক্তির উৎস, লড়াইয়ের প্রতিচ্ছবি হয়ে।

বিজয়ের মাস আমাদের শুধু গৌরবের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় না; আমাদের শেকড়, আমাদের সাহস, আমাদের অস্তিত্বের জন্মমুহূর্তকে নতুন করে চিনতে।

গোলজার রহমান ধামইরহাট (নওগাঁ) প্রতিনিধি

ধামইরহাটে মালিক বিহীন ফেনসিডিল উদ্ধার

গোলজার রহমান ধামইরহাট (নওগাঁ) প্রতিনিধি প্রকাশিত: রবিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৬:৩৫ পিএম
ধামইরহাটে মালিক বিহীন ফেনসিডিল উদ্ধার

নওগাঁর ধামইরহাটে মালিক বিহীন অবস্থায় নিষিদ্ধ ঘোষিত ভারতীয় নেশা জাতীয় মাদকদ্রব্য ফেনসিডিল ও কাশির সিরাপ আটক করা হয়েছে। আজ শনিবার রাত সাড়ে দশটার দিকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেন বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বিজিবি পত্নীতলা ব্যাটালিয়নের (১৪ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন পিবিজিএম।

বিজিবি সময়ের আলোকে জানায়, শনিবার রাতে সীমান্ত পিলার ২৬৮/৮ এস হতে আনুমানিক ২০০ গজ দূরত্বে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে, আলতাদিঘির পশ্চিম পাশে মালিক বিহীন অবস্থায় ১৪ বোতল ভারতীয় নেশা জাতীয় মাদকদ্রব্য ফেনসিডিল ও ৯ বোতল কাশির সিরাপ আটক করা হয়েছে।

বিজিবি আরও জানায়, চোরাকারবারীরা বিজিবির উপস্থিতি টের পেয়ে রাতের অন্ধকারে মাদকদ্রব্য ফেলে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। যার সিজার মূল্য নয় হাজার দুইশ টাকা।

 

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ

কুড়িগ্রামে শত্রুতার জেরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ প্রকাশিত: রবিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৬:৩২ পিএম
কুড়িগ্রামে শত্রুতার জেরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট

কুড়িগ্রাম সদরের মোগলবাসা ইউনিয়নে পৃর্ব শত্রুতার জেরে অগ্নিসংযোগ লুটপাটরের ঘটনায় প্রায় ৪ লক্ষাধিক টাকা ক্ষতিসাধন করার অভিযোগ উটেছে মোঃ মোখলেছ, মজিদুল,ইলিয়াস,মোজাম্মেল সহ একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।অভিযুক্তরা সদর উপজেলার মোগলবাসা ইউনিয়ের বাসিন্দা। এ ঘটনায় কুড়িগ্রাম সদর থানায় অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী আমিনা বেগম।

অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, মোগলবাসা ইউনিয়ের মােছাঃ আমিনা বেগম (৩৬), স্বামী- জাহিদুল ইসলাম, গ্রাম- মােগলবাসা মালভাদা, ডাকঘর: মালবাসা, উপজেলা: কুড়গ্রাম সদর, জেলা: কুড়গ্রাম থানায় হাজির হইয়া বিবাদী ১। মােখলেছ (৩৫), পিতা- গাজিউর রহমান, ২। রাজু (৫৬), পিতা- নুর ইসলাম ৩। মােজাম্মেল হক (৪০), পিতা- আজিজল, ৪। আল আমিন (২০), পিতা- গাজীউর রহমান, ৫। আক্কাছ হাসেন (২৫), পিতা- গফফার আলী, ৬। আবু তাহের (২৪), পিতা- গফফার আলী, ৭। গফ্ফার আলী (৫৫), ৮। গফযুর আলী (৫০), ৯। হারুন (৪৫), সরব পিতা- মৃত মনছের ১৩। ইলিয়াস (৪২), পিতা- আঃ কাদের, ১৪। মজিদুল (৩৭) পিতা- আঃ কাদের সব সাং- মােগলবাসা মালভাঙ্গা, আগে আমাদের এলাকার জনৈক জাহিদ হাসান বছির এর স্ত্রী সঙ্গে জনৈক আকাশের মধ্যে পরকিয়া সম্পর্কের কারনে বাছর মারা যায়। সই বিষয়ে কুড়িগ্রাম থানায় মামলা হয়। মামলাটি চলমান রয়েছে। উক্ত মামলায় আমার শন্তড় আসামী কোন আসামী নাই। উতক্ত জাহিদ হাসান বছির এর মারা যাওয়ার বিষয়কে কেন্দ্র করিয়া গত ইং ০৫/১২/২০২৫ ইং তারিখ ভাচুর করে ক্ষতি সাধন করে। বিবাদীগণ আমার ২টি গরু ৩টি ছাগল, ০২ ভরি ওজনের স্বনালংকার, নগদ ৪০,০০০/- যায়। ঘটনার বিষয় প্রতিবেশী লােকজনসহ স্বাক্ষী-১। হাফিজুল, পিতা- জাবেদ আলী, ২। মাইদুল মিয়া, পিতা- আক্বর আলী, ৩। সাহেব আলী, পিতা- অজ্ঞাত, সব সাং-মােগলবাসা মালভাঙ্গা, ডাকঘর: মােলবাসা, উপজেলা: কুড়িগ্রাম সদর, জেলা: কুড়িগ্রামগন সহ আরোও অনেকে দেখেন ও শোনে। পরের দিন ইং ০৬/১২/২০২৫ তাং দুপুর অনুমান ১২.০০ বাড়ীঘর পূুড়িয়া গিয়ে ঘর বাড়ীতে বসবারের মত পরিবেশ নাই।

ভুক্তভোগী মোছাঃ আমিনা বেগম জানায়,আমার স্বামী ঢাকায় থাকে।আমি তিন সন্তান নিয়ে বাড়ি থাকি।হঠাৎ আমার বাড়িতে ১০/১৫ জন লোক নিয়ে এসে হামলা আগুন জ্বালিয়ে দেয়।আগুনে বাড়ি পোড়া ছাড়াও নগদ প্রায় ৪ লাখ টাকার ক্ষয় ক্ষতি করে।বর্তমানে আমি তিন সন্তান নিয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে আছি।আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে নিরপেক্ষ বিচার চাই।

এ-বিষয়ে কুড়িগ্রাম সদর থানার অফিসার ইনচার্জ হাবিবুর রহমান বলেন,অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।

সুলেখা আক্তার শান্তা

আলোছায়ার পথ

সুলেখা আক্তার শান্তা প্রকাশিত: রবিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৪:২৪ পিএম
আলোছায়ার পথ

এক রোদেলা দুপুর। অফিসে নিজের কাজে মগ্ন ছিল নাফিজা। হঠাৎ চোখ তুলতেই দেখে সহকর্মী রিফাত গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। নাফিজা মুহূর্তে থমকে যায়। মনে মনে ভাবতে থাকে, এভাবে তাকিয়ে আছে কেন? সে অস্বস্তি ঢাকতে টেবিলের উপর কলম দিয়ে টুং টাং শব্দ করে। রিফাত মাথা ঝাঁকিয়ে হেসে ফেলে। ইশারায় নাফিজা জানতে চায়, কী হয়েছে? রিফাত হেসে বলে, কিছু না। অফিসে তাদের টেবিল পাশাপাশি। কিন্তু তেমন কথা হয় না।
পরদিন টেবিলে বসেই নাফিজা দেখে একটি সতেজ সবুজ পাতা, হালকা কুড়ানো, যেন টেবিলের উপর রেখে যাওয়া এক নিঃশব্দ বার্তা। প্রথমে ভেবেছিল, বাতাসে এসে পড়েছে। কিন্তু পরপর কয়েকদিন একইরকম পাতা দেখে। নাফিজা পিয়ন দুলালকে ডাকে, এই পাতা তুমি রাখো?
দুলাল অবাক, না ম্যাডাম, আমি জানিনা!
তাহলে কে?
দুই হাত প্যান্টের পকেটে, চোখে একরাশ উদ্বেগ নিয়ে রিফাত এগিয়ে এলো নাফিজার দিকে। সে হাসিমুখে বলল, এই পাতা কে রাখে ভাবছো?
হ্যাঁ।
জানতে চাও?
জানতে চাই? কিন্তু বুঝে উঠতে পারছি না কে রাখে।
রিফাত একটু থেমে বলল, অফিস শেষে বের হয়ে বলবো।
সন্ধ্যার আলোয় দুজনে হাঁটছে পাশাপাশি। হঠাৎ রিফাত থেমে বলল, এই পাতাটা যতক্ষণ জীবনের রস ধরে রাখতে পারে, ততক্ষণ সতেজ থাকে। ঠিক সেরকম, যতক্ষণ তুমি আমার দৃষ্টির সীমানায় থাকো, আমি সতেজ থাকি। আর তুমি যখন চোখের আড়ালে যাও… আমি ও পাতার মতো শুকিয়ে যাই। তুমি আড়ালে গেলে ঠিক এই শুকনো পাতার মতো আমি। প্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলি।
নাফিজা বিস্ময়ে হয়ে বলে, বা! আমি কারো প্রাণশক্তি? রিফাত হেসে ওঠে, তোমাকে না দেখলে আমি প্রাণহীন হয়ে পড়ি। এটুকুতেই সমস্ত অপ্রকাশিত অনুভূতির ঢেউ আছড়ে পড়ে নাফিজার মনে।
পরদিন অফিসে টেবিলে সে একটি পাতা দেখে, রিফাতের দিকে তাকায়, এবার তার ঠোঁটে হালকা এক হাসি। দুজনে মাঝে মাঝেই চোখে চোখ রাখে, শব্দহীন ভালোবাসার ভাগাভাগি।
সন্ধ্যায় রাস্তার মোড়ে দিয়ে দু’জনে হেঁটে যাচ্ছিলো হঠাৎ রিফাত ধীরে বলে উঠলো, আমি তোমাকে ভালোবাসি নাফিজা। এক পলকের নীরবতা। নাফিজার কাছ থেকেও ভালোবাসার সম্মতি। উদার মনে বলে রিফাত, ভালোবাসা শুধু অনুভব নয়, তা দায়িত্বও বটে।
মাস তিনেক পর একদিন, রিফাত বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। নাফিজা একটু চমকে গিয়ে বলে, এখনি? বিয়ে তো করব, তবে পরিবারের সম্মতি ছাড়া নয়। পরিবারকে জানিয়ে। ঠিক আছে পরিবারকে জানিয়েই বিয়ে হবে। আমি আমার দিকে বলবো তুমি তোমার দিকে বলো। আমার তো শুধু মা আছে, বলে নাফিজা। ঠিক আছে তুমি তাঁকে জানাও।
দুজনই পরিবারের সম্মতি নেয়। নাফিজার মা রেবেকা বলেন, যদি তোমরা একে অপরকে বিয়ে করতে চাও, ঠিক আছে। আশীর্বাদ রইলো।
বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হয়। নাফিজা সবকিছুর প্রস্তুতি নিজেই নিচ্ছিল। নাফিজা তার মায়ের একমাত্র মেয়ে সবকিছু তার নিজেরেই করতে হয়। স্বপ্ন তার বাস্তব হবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন ভেঙে যায় এক অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায়। মার্কেট থেকে ফেরার পথে, হঠাৎ একটি গাড়ি ধাক্কা দেয় নাফিজাকে। রাস্তায় রক্তে ভেসে যায় তার স্বপ্ন। আর পথচারীরা ছুটে নিয়ে যায় নাফিজাকে হাসপাতালে। চিকিৎসা চলে। অনেক চেষ্টা করেও ভালো করা যায় না তার একটা পা। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা নাফিজা চোখ মেলে দেখে, রিফাত পাশে দাঁড়িয়ে। সে হাত ধরে বলে, তোমার কিছুই হয়নি নাফিজা। তুমি এখনো সেই মানুষ, যাকে দেখলে আমার মন আনন্দে থাকে। পা থাক বা না থাক, তাতে কি আসে যায়?
হাসপাতালের বিছানায় নিস্তব্ধ শুয়ে থাকা মেয়েকে দেখে রেবেকা ভেঙে পড়েন। দু’চোখ দিয়ে ঝরে পড়া অশ্রুর সঙ্গে কণ্ঠ ফেটে বেরিয়ে আসে হৃদয়ের আর্তনাদ। আমার মেয়ের এমন কেন হলো আল্লাহ্? এখন আমি কীভাবে বাঁচব? আমার তো ও ছাড়া আর কেউ নেই! রিফাত চুপচাপ দাঁড়িয়ে, চোখে জল, কিন্তু মুখে স্থিরতা। সে ধীরে বলে, ভেঙে পড়বেন না মা। আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন। রেবেকা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, হ্যাঁ, তাঁরই উপর তো ভরসা আছে। এই কষ্ট কীভাবে সইব জানি না।
দীর্ঘ হাসপাতালে কাটানো দিন শেষে নাফিজাকে বাড়ি ফিরিয়ে আনা হয়। কিন্তু জীবন আর আগের মতো নেই। দেহে এখন এক পায়ের শূন্যতা, আর মনের কোণে বেদনার ঘূর্ণি। পঙ্গুত্বের কারণে চাকরি চলে যায়, সংসারের পথ আরও কঠিন হয়ে পড়ে। রেবেকা অসহায় হয়ে ভাবেন। মেয়ের কী হবে! কে হবে আশ্রয়? এই বাস্তবতার মুখে কেমন করে চলবে দিন?
নাফিজা–রিফাত যখন একসাথে সুখের স্বপ্ন বুনছিল, তখনই এক কালো মেঘ এসে ঢেকে দিলো তাদের আকাশ। রিফাত পরিবারের কাছে বলে, আমি নাফিজাকে বিয়ে করতে চাই। বাবা, মোহন খান শব্দের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বললেন, পঙ্গু মেয়েকে ঘরের বউ করা যাবে না। ওর তো চাকরিও নেই এখন। তুমি ওর জীবন থেকে সরে দাঁড়াও, ওর বোঝা আমাদের ঘাড়ে তুলে নিব কেন? রিফাত বলল, বাবা, এমন স্বার্থপর কেন হচ্ছেন? ভালোবাসা তো দয়া নয়। আমি নাফিজাকে ভালোবাসি ওর দেহকে নয় ওর মানসিকতাকে। মোহন খান ধমকের স্বরে বললেন, তর্ক করো না! আমার চোখের সামনে থেকে চলে যাও।
রিফাত নাফিজার সামনে হাজির হয়। কিন্তু কণ্ঠে স্থিরতা, বলল রিফাত, নাফিজা আমরা বিয়ে করব। নাফিজা একটু থেমে, মুখ ঘুরিয়ে বলে, রিফাত, তুমি এখন বিয়ে করতে চাও, সেটা করুণা। আমি কারো করুণা চাই না। রিফাত হতভম্ব হয়ে বলল, করুণা? ভালোবাসা করুণার নয় একটি সম্মানের সম্পর্ক। তোমাকে ভালোবাসি, সম্মান করি। তুমি আজও আমার প্রাণশক্তি, আমার জীবন। নাফিজা গম্ভীর গলায় বলে, তোমার পরিবার যখন আমায় গ্রহণ করছে না, তখন তুমি কীভাবে এই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখবে? রিফাত নিঃশ্বাস ফেলে বলে, আমি তোমাকে ছুড়ে ফেলতে ভালোবাসি নেই। তোমাকে ভালোবেসেছি আমার জীবন সাথী হিসেবে পাওয়ার জন্য। তোমাকে ছেড়ে যাওয়া মানে আমার আত্মাকে অস্বীকার করা। তোমার পাশে থাকব এই দুঃসময়ে এটা দায়িত্ব নয়, এটাই আমার ভালোবাসা। রেবেকা পাশে দাঁড়িয়ে সব শুনছিলেন। মুগ্ধ হয়ে মেয়েকে বলেন, মা, ছেলেটা সত্যিই ভালো। এমন ভালোবাসা জীবনে খুব কম পাওয়া যায়। ওকে গ্রহণ কর মা। মা রেবেকার চোখে জল, কিন্তু তাতে আনন্দের ঝিলিক। ও তোকে ভালোবাসে মা। এমন ছেলে ভাগ্যে কজনের জোটে? তুই ওকে গ্রহণ কর, সে তো তোকে হারাতে চায় না। নাফিজার চোখে তখন ভীষণ প্রশান্তি। রিফাতের ভালোবাসা, তার সংকল্প, তার সমস্ত দুর্বলের ওপর এক অটল আশ্রয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে রিফাতের হাত ধরে বলে, আমি চাই… আমি চাই তোমার সঙ্গে বাকি জীবনটা কাটাতে। নাফিজার মুখে এ কথা শোনার পর রিফাতের যেন এক অচিন্তনীয় উচ্ছ্বাস। সে নিজেই বিয়ের সমস্ত আয়োজন করে। শাড়ি থেকে অলঙ্কার, নিজে হাতে ফুল দিয়ে বাসর ঘর সাজিয়ে তোলে।
বিয়ের দিনে, যখন ঘোমটার আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো নাফিজা, রিফাত নিঃশ্বাস আটকে তাকিয়ে থাকে। “মাশা’আল্লাহ! কী অপূর্ব লাগছে তোমায়।” দুজন মধুময় বাসরে রাত কাটায়, নয়নজুড়ে স্নিগ্ধ ভালোবাসা আর হৃদয়ে অটুট প্রতিশ্রুতি।
বিয়ের কিছুদিন পর হঠাৎ একদিন… মোহন খান সোজা এসে দাঁড়ান রিফাতের সামনে, চোখে স্নিগ্ধতা। আমার বউমাকে নিয়ে যেতে এসেছি, বলেন তিনি নিঃশব্দ গলায়। চলো বাবা, বউমাকে নিয়ে ঘরে। রিফাত এক মুহূর্ত স্তব্ধ, চোখ ঝলমলিয়ে ওঠে আনন্দে। সে ধীরে নাফিজার দিকে এগিয়ে যায়। হাত ধরে বলে, চলো, আমার ঘরের আলো। নাফিজা এক বিন্দু অশ্রু নিয়ে বলে, আজ নিজেকে বড় ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে। যে ভালোবাসা আমি পেয়েছি, তা কল্পনারও বাইরে। ঘরভর্তি আনন্দ, চোখভর্তি স্বপ্ন, জীবনে যেন বসন্তের পুণর্জন্ম। তাদের সংসার হয়ে ওঠে ভালোবাসার ঠিকানা।
নাফিজার মনে এক গভীর প্রশান্তি। যে জীবন থেমে যেতে পারতো, সেই জীবনই এখন বেঁচে আছে এক অনন্য ভালোবাসার উচ্ছ্বাসে। আমি ভাগ্যবতী, কারণ এমন একজন মানুষকে পেয়েছি, সে আমার পাশে ছায়া মতো দাঁড়িয়ে আছে। সম্পর্ক টিকে সম্মান, ভালোবাসা আর পারস্পরিক আস্থার উপর। সব ভালোবাসা পূর্ণতা পাক। থাক বিশ্বাস, সম্মান আর ভালোবাসার মলাটে বাঁধা।