রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

অগ্নিঝরা বিজয়ের মাসে ফিরে দেখা 

বঙ্গনারীর অগ্নিজন্ম, মুক্তির রণতরী, বীরকন্যা বীর প্রতীক তারামন বিবির অমর সাহস

ডেস্ক নিউজ
ডেস্ক নিউজ প্রকাশিত: সোমবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১:৫০ পিএম | 53 বার পড়া হয়েছে
বঙ্গনারীর অগ্নিজন্ম, মুক্তির রণতরী, বীরকন্যা বীর প্রতীক তারামন বিবির অমর সাহস

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে কিছু চরিত্র আছেন, যাদের জীবন যেন একটি প্রতীকের নাম। নিপীড়নের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো, অসম সাহস, অটল দেশপ্রেম এবং মানবিক শক্তির এক বিরল সম্মিলন-মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবি (বীর প্রতীক) সেইসব বিরল চরিত্রদের একজন। তিনি বাংলাদেশের নারী শক্তির গোপন ও মহিমান্বিত ইতিহাস।

মাত্র ১৩ বছরের কিশোরী, অথচ একসময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে বিভ্রান্ত করে, অস্ত্র হাতে সম্মুখযুদ্ধে লড়ে, গুপ্তচর সেজে শত্রু শিবিরের অন্তঃস্থলে প্রবেশ করে, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য জীবনবাজি রেখে তথ্য এনে দিয়েছেন-এমন এক কিংবদন্তী নারী আমাদের ইতিহাসে আর কেউ নন, তারামন বিবি।

তারামন বিবির জন্ম ১৯৫৭ সালে কুড়িগ্রাম জেলার চর রাজিবপুর উপজেলার কোদালকাটি ইউনিয়নের শংকর মাধবপুর গ্রামে। চরাঞ্চলের অসহায় বাস্তবতা, ভাঙন, নদী, তীব্র দারিদ্র্য-এসবই ছিল তার শৈশবের পরিবেশ। তার আসল নাম ছিল তারাবানু।

ছোটবেলা থেকেই শ্রমসাধ্য জীবনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠা এ কিশোরীর ছিল তীক্ষ্ণ বুদ্ধি, ক্ষিপ্রতা আর এক অদ্ভুত দৃঢ় মানসিকতা। এই কিশোরীটি জানত না, খুব শীঘ্রই তার জীবনধারাই বদলে যাবে, তিনি হয়ে উঠবেন মুক্তিযুদ্ধের এক জীবন্ত গল্প।

সাল ১৯৭১। উত্তাল সময়। মাত্র ১৩ বছরের তারাবানুর গ্রাম হয়ে ওঠে যুদ্ধের আবর্ত। গ্রামে পাকিস্তানি সৈন্য নেমছে, চারদিকে আতঙ্ক, লুটপাট। তার গ্রাম পড়েছিল ১১ নম্বর সেক্টরের অধীনে, যার নেতৃত্বে ছিলেন সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল আবু তাহের।

একদিন মুক্তিযোদ্ধা মুহিব হাবিলদার তাদের বাড়িতে এসে জানালেন-ক্যাম্পে রান্না, ধোয়া-মোছার জন্য একজন মেয়ে দরকার। তারাবানুর মা প্রথমে রাজি হননি; যুদ্ধের আগুনে মেয়েকে পাঠানো কি সহজ কথা? কিন্তু মুহিব হাবিলদারের আশ্বাস “ও আমার ধর্ম মেয়ে। সব দায়িত্ব আমার।” অবশেষে মায়ের মন গলল।

সেই মুহূর্ত থেকেই শুরু তারাবানুর নতুন যাত্রা। ক্যাম্পেই তার নামের শেষে যোগ হয়-তারামন।

ক্যাম্পে তিনি রান্না করতেন, কাপড় ধুতেন, অস্ত্র পরিষ্কার করতেন। কিন্তু এগুলোই তার শেষ কাজ ছিল না। তাঁর চোখের দীপ্তিতে মুহিব হাবিলদার বুঝতে পারলেন-এই কিশোরী শুধু কাজ করতে আসেনি, লড়তে এসেছে।

মুহিব হাবিলদার প্রথমে অবাক হলেও পরে তাকে রাইফেল শেখান। যেহেতু তিনি ছিলেন অল্পবয়সী ও শারীরিকভাবে ক্ষুদ্রকায়, তাই তাকে স্টেনগানও ব্যবহার করতে শেখানো হয়। দু’হাতে আগুন হয়ে ওঠা ১৩ বছরের কিশোরীটি খুব দ্রুত অস্ত্র ব্যবহারে পারদর্শী হয়ে ওঠেন। তার পর থেকেই তিনি আর কেবল ক্যাম্পের কন্যাই নয়, তিনি হয়ে উঠলেন একজন যোদ্ধা।

উত্তাল সেই দিন গুলোর মধ্যে কোনো একদিন মধ্যাহ্নভোজের সময় ক্যাম্পের সবাই যখন খেতে ব্যস্ত, তারামন নজর রাখছিলেন চারপাশে। সুপারি গাছে উঠে তিনি দেখলেন, পাকিস্তানিদের গানবোট দ্রুতগতিতে আসছে। তার সতর্কবার্তায় মুক্তিবাহিনী মুহূর্তেই অবস্থান নেয়, ঘণ্টার পর ঘণ্টা যুদ্ধ চলে। অন্যথায় সেই ক্যাম্পের সব মুক্তিযোদ্ধাই হয়তো সেদিন বেঁচে ফিরতেন না। এটা ছিল তারামন বিবির প্রথম বড় যুদ্ধ-অবদান।

 

তারামনের সবচেয়ে দুর্ধর্ষ ভূমিকা ছিল গুপ্তচর হিসেবে। তিনি কখনো-চুলে জট বাঁধা পাগলি, কখনো কাদা মাখা পথনারী, কখনো অঙ্গহানি হওয়া ভিখারিনীর অভিনয়ে পাকিস্তানি শিবিরে ঢুকে পড়তেন। হানাদাররা মনে করত-পাগল নারী ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা হাসত, অপমান করত, তিরস্কার করত। কিন্তু তাদের অগোচরে কিশোরী তারামন নিশ্চুপে পর্যবেক্ষণ করতেন শিবিরের প্রতিটি কোণ, অস্ত্রের অবস্থান, সৈন্যদের চলন-বলন, প্রতিরক্ষা দুর্বলতা।

তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বহু সফল অপারেশন পরিচালনা করে মুক্তিবাহিনী। মৃত্যুকে তুচ্ছ করে কিশোরীর এমন বুদ্ধিমত্তা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক অনন্য বিস্ময়।

১৯৭১ সালের অক্টোবর। দু’পাড়ের (খালিয়াডাঙ্গা-ভেলামারী) মাঝখানে খাল, এক পাশে মুক্তিযোদ্ধা, অন্য পাশে পাকিস্তানি সেনারা। এই সময়েই তারামন কাদা মাখা ‘পাগলী’ সেজে ঢুকে গেলেন সেনা ক্যাম্পে। দুরন্ত অভিনয় আর প্রবল বুদ্ধিমত্তায় তিনি ক্যাম্পের প্রতিটি রক্ষাব্যূহ বুঝে নিলেন। ফিরে এসে জানালেন, “কোথায় আক্রমণ করলে সবচেয়ে ভয়ংকর ক্ষতি হবে।”

এই তথ্যের উপর ভিত্তি করে পরদিনই হয় এক সফল আক্রমণ। এক কিশোরী সামলাতে পেরেছিল একটি অপারেশনের কৌশলগত মেরুদণ্ড-যা আজও বিস্ময়েরই নাম।

১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করে। কিন্তু বেদনাদায়ক বাস্তবতা তিনি নিজেই জানতেন না যে তিনি একজন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা!

চরাঞ্চলের দারিদ্র্য, সামাজিক অস্থিরতা, অজ্ঞাতেই দিন কেটেছে তার। বিয়ের পর তাঁর স্বামী আব্দুল মজিদও জানতেন না যে তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। স্বামী এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “হ্যায় যে মুক্তিযোদ্ধা-হেইটা বিয়ের পরও বুঝি নাই।” ১৯৯৫ সালে অধ্যাপক বিমল কান্তি দে, আবদুস সবুর ফারুকী ও সোলায়মান আলীর গবেষণা ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে তাকে পুনরায় বাংলাদেশ জানল।

২১ নভেম্বর ১৯৯৫। দৈনিক ভোরের কাগজের প্রথম পাতার শিরোনাম হল, “হারানো বীর প্রতীক তারামন বিবিকে খুঁজে পাওয়া গেছে।” ১৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী তার হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা তুলে দেন।

যুদ্ধোত্তর জীবন তার জন্য সুখকর ছিল না।

অসচ্ছলতা, অবহেলা, সরকারি সহায়তার অভাব-এসবই ছিল তার বাস্তব জীবন।

কিন্তু তবুও তার মুখে ছিল না অভিযোগ। তিনি বলতেন, “দেশ স্বাধীন হইছে—এটাই বড় কথা।”

এই নারী কণ্ঠের সরল বাক্যের ভিতরেই লুকিয়ে আছে এক জাতির মহত্তম মর্যাদা।

১ ডিসেম্বর ২০১৮। বিজয়ের মাসের প্রথম প্রহরে প্রয়াত হলেন তারামন বিবি। তার মৃত্যু যেন ইতিহাসের প্রতীকী দাগ। যেন বিজয়ের মাসেই স্বাধীনতার এক সত্যিকারের আলো নিভে গেলো।

কিন্তু তিনি রয়ে গেলেন ইতিহাসে বাংলাদেশের নারী সংগ্রামের প্রতীক, শক্তির উৎস, লড়াইয়ের প্রতিচ্ছবি হয়ে।

বিজয়ের মাস আমাদের শুধু গৌরবের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় না; আমাদের শেকড়, আমাদের সাহস, আমাদের অস্তিত্বের জন্মমুহূর্তকে নতুন করে চিনতে
Hrs Rakib
মোঃ রাকিব হাসান

কুড়িগ্রাম (রাজিবপুর) প্রতিনিধি

অগ্নিঝরা বিজয়ের মাসে ফিরে দেখা বঙ্গনারীর অগ্নিজন্ম, মুক্তির রণতরী, বীরকন্যা বীর প্রতীক তারামন বিবির অমর সাহস

 

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে কিছু চরিত্র আছেন, যাদের জীবন যেন একটি প্রতীকের নাম। নিপীড়নের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো, অসম সাহস, অটল দেশপ্রেম এবং মানবিক শক্তির এক বিরল সম্মিলন-মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবি (বীর প্রতীক) সেইসব বিরল চরিত্রদের একজন। তিনি বাংলাদেশের নারী শক্তির গোপন ও মহিমান্বিত ইতিহাস।

মাত্র ১৩ বছরের কিশোরী, অথচ একসময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে বিভ্রান্ত করে, অস্ত্র হাতে সম্মুখযুদ্ধে লড়ে, গুপ্তচর সেজে শত্রু শিবিরের অন্তঃস্থলে প্রবেশ করে, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য জীবনবাজি রেখে তথ্য এনে দিয়েছেন-এমন এক কিংবদন্তী নারী আমাদের ইতিহাসে আর কেউ নন, তারামন বিবি।

তারামন বিবির জন্ম ১৯৫৭ সালে কুড়িগ্রাম জেলার চর রাজিবপুর উপজেলার কোদালকাটি ইউনিয়নের শংকর মাধবপুর গ্রামে। চরাঞ্চলের অসহায় বাস্তবতা, ভাঙন, নদী, তীব্র দারিদ্র্য-এসবই ছিল তার শৈশবের পরিবেশ। তার আসল নাম ছিল তারাবানু।

ছোটবেলা থেকেই শ্রমসাধ্য জীবনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠা এ কিশোরীর ছিল তীক্ষ্ণ বুদ্ধি, ক্ষিপ্রতা আর এক অদ্ভুত দৃঢ় মানসিকতা। এই কিশোরীটি জানত না, খুব শীঘ্রই তার জীবনধারাই বদলে যাবে, তিনি হয়ে উঠবেন মুক্তিযুদ্ধের এক জীবন্ত গল্প।

সাল ১৯৭১। উত্তাল সময়। মাত্র ১৩ বছরের তারাবানুর গ্রাম হয়ে ওঠে যুদ্ধের আবর্ত। গ্রামে পাকিস্তানি সৈন্য নেমছে, চারদিকে আতঙ্ক, লুটপাট। তার গ্রাম পড়েছিল ১১ নম্বর সেক্টরের অধীনে, যার নেতৃত্বে ছিলেন সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল আবু তাহের।

একদিন মুক্তিযোদ্ধা মুহিব হাবিলদার তাদের বাড়িতে এসে জানালেন-ক্যাম্পে রান্না, ধোয়া-মোছার জন্য একজন মেয়ে দরকার। তারাবানুর মা প্রথমে রাজি হননি; যুদ্ধের আগুনে মেয়েকে পাঠানো কি সহজ কথা? কিন্তু মুহিব হাবিলদারের আশ্বাস “ও আমার ধর্ম মেয়ে। সব দায়িত্ব আমার।” অবশেষে মায়ের মন গলল।

সেই মুহূর্ত থেকেই শুরু তারাবানুর নতুন যাত্রা। ক্যাম্পেই তার নামের শেষে যোগ হয়-তারামন।

ক্যাম্পে তিনি রান্না করতেন, কাপড় ধুতেন, অস্ত্র পরিষ্কার করতেন। কিন্তু এগুলোই তার শেষ কাজ ছিল না। তাঁর চোখের দীপ্তিতে মুহিব হাবিলদার বুঝতে পারলেন-এই কিশোরী শুধু কাজ করতে আসেনি, লড়তে এসেছে।

মুহিব হাবিলদার প্রথমে অবাক হলেও পরে তাকে রাইফেল শেখান। যেহেতু তিনি ছিলেন অল্পবয়সী ও শারীরিকভাবে ক্ষুদ্রকায়, তাই তাকে স্টেনগানও ব্যবহার করতে শেখানো হয়। দু’হাতে আগুন হয়ে ওঠা ১৩ বছরের কিশোরীটি খুব দ্রুত অস্ত্র ব্যবহারে পারদর্শী হয়ে ওঠেন। তার পর থেকেই তিনি আর কেবল ক্যাম্পের কন্যাই নয়, তিনি হয়ে উঠলেন একজন যোদ্ধা।

উত্তাল সেই দিন গুলোর মধ্যে কোনো একদিন মধ্যাহ্নভোজের সময় ক্যাম্পের সবাই যখন খেতে ব্যস্ত, তারামন নজর রাখছিলেন চারপাশে। সুপারি গাছে উঠে তিনি দেখলেন, পাকিস্তানিদের গানবোট দ্রুতগতিতে আসছে। তার সতর্কবার্তায় মুক্তিবাহিনী মুহূর্তেই অবস্থান নেয়, ঘণ্টার পর ঘণ্টা যুদ্ধ চলে। অন্যথায় সেই ক্যাম্পের সব মুক্তিযোদ্ধাই হয়তো সেদিন বেঁচে ফিরতেন না। এটা ছিল তারামন বিবির প্রথম বড় যুদ্ধ-অবদান।

 

তারামনের সবচেয়ে দুর্ধর্ষ ভূমিকা ছিল গুপ্তচর হিসেবে। তিনি কখনো-চুলে জট বাঁধা পাগলি, কখনো কাদা মাখা পথনারী, কখনো অঙ্গহানি হওয়া ভিখারিনীর অভিনয়ে পাকিস্তানি শিবিরে ঢুকে পড়তেন। হানাদাররা মনে করত-পাগল নারী ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা হাসত, অপমান করত, তিরস্কার করত। কিন্তু তাদের অগোচরে কিশোরী তারামন নিশ্চুপে পর্যবেক্ষণ করতেন শিবিরের প্রতিটি কোণ, অস্ত্রের অবস্থান, সৈন্যদের চলন-বলন, প্রতিরক্ষা দুর্বলতা।

তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বহু সফল অপারেশন পরিচালনা করে মুক্তিবাহিনী। মৃত্যুকে তুচ্ছ করে কিশোরীর এমন বুদ্ধিমত্তা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক অনন্য বিস্ময়।

১৯৭১ সালের অক্টোবর। দু’পাড়ের (খালিয়াডাঙ্গা-ভেলামারী) মাঝখানে খাল, এক পাশে মুক্তিযোদ্ধা, অন্য পাশে পাকিস্তানি সেনারা। এই সময়েই তারামন কাদা মাখা ‘পাগলী’ সেজে ঢুকে গেলেন সেনা ক্যাম্পে। দুরন্ত অভিনয় আর প্রবল বুদ্ধিমত্তায় তিনি ক্যাম্পের প্রতিটি রক্ষাব্যূহ বুঝে নিলেন। ফিরে এসে জানালেন, “কোথায় আক্রমণ করলে সবচেয়ে ভয়ংকর ক্ষতি হবে।”

এই তথ্যের উপর ভিত্তি করে পরদিনই হয় এক সফল আক্রমণ। এক কিশোরী সামলাতে পেরেছিল একটি অপারেশনের কৌশলগত মেরুদণ্ড-যা আজও বিস্ময়েরই নাম।

১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করে। কিন্তু বেদনাদায়ক বাস্তবতা তিনি নিজেই জানতেন না যে তিনি একজন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা!

চরাঞ্চলের দারিদ্র্য, সামাজিক অস্থিরতা, অজ্ঞাতেই দিন কেটেছে তার। বিয়ের পর তাঁর স্বামী আব্দুল মজিদও জানতেন না যে তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। স্বামী এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “হ্যায় যে মুক্তিযোদ্ধা-হেইটা বিয়ের পরও বুঝি নাই।” ১৯৯৫ সালে অধ্যাপক বিমল কান্তি দে, আবদুস সবুর ফারুকী ও সোলায়মান আলীর গবেষণা ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে তাকে পুনরায় বাংলাদেশ জানল।

২১ নভেম্বর ১৯৯৫। দৈনিক ভোরের কাগজের প্রথম পাতার শিরোনাম হল, “হারানো বীর প্রতীক তারামন বিবিকে খুঁজে পাওয়া গেছে।” ১৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী তার হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা তুলে দেন।

যুদ্ধোত্তর জীবন তার জন্য সুখকর ছিল না।

অসচ্ছলতা, অবহেলা, সরকারি সহায়তার অভাব-এসবই ছিল তার বাস্তব জীবন।

কিন্তু তবুও তার মুখে ছিল না অভিযোগ। তিনি বলতেন, “দেশ স্বাধীন হইছে—এটাই বড় কথা।”

এই নারী কণ্ঠের সরল বাক্যের ভিতরেই লুকিয়ে আছে এক জাতির মহত্তম মর্যাদা।

১ ডিসেম্বর ২০১৮। বিজয়ের মাসের প্রথম প্রহরে প্রয়াত হলেন তারামন বিবি। তার মৃত্যু যেন ইতিহাসের প্রতীকী দাগ। যেন বিজয়ের মাসেই স্বাধীনতার এক সত্যিকারের আলো নিভে গেলো।

কিন্তু তিনি রয়ে গেলেন ইতিহাসে বাংলাদেশের নারী সংগ্রামের প্রতীক, শক্তির উৎস, লড়াইয়ের প্রতিচ্ছবি হয়ে।

বিজয়ের মাস আমাদের শুধু গৌরবের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় না; আমাদের শেকড়, আমাদের সাহস, আমাদের অস্তিত্বের জন্মমুহূর্তকে নতুন করে চিনতে।

নির্বাহী সম্পাদকঃ অঞ্জনা চৌধুরী

কাজিপুর উপজেলায় যমুনা নদীতে নতুন চর জেগে ওঠায় নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে

নির্বাহী সম্পাদকঃ অঞ্জনা চৌধুরী প্রকাশিত: রবিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১২:০২ পিএম
কাজিপুর উপজেলায় যমুনা নদীতে নতুন চর জেগে ওঠায় নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে

সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলায় যমুনা নদীতে নতুন চর জেগে ওঠায় নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে, যা মনসুরনগর চরের শিক্ষার্থীদেরসহ স্থানীয়দের যাতায়াতে চরম ভোগান্তি সৃষ্টি করছে; বিশেষ করে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে ও স্কুলে যেতে তাদের ডুবোচরের উপর দিয়ে হেঁটে যেতে হচ্ছে, যা একটি বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে।
মূল সমস্যা: শুষ্ক মৌসুমে জেগে ওঠা অসংখ্য ডুবোচর যাতায়াতে বাধা দিচ্ছে।
প্রভাব: ছাত্রছাত্রী, রোগীসহ সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
উদাহরণ: মনসুরনগর চরের লোকজন কাজিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে ও শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যেতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।

রুহুল আমিন রুকু, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ

কুড়িগ্রামে যথাযোগ্য মর্যাদায় হানাদার মুক্ত দিবস পালিত

রুহুল আমিন রুকু, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ প্রকাশিত: রবিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১১:৫০ এএম
কুড়িগ্রামে যথাযোগ্য মর্যাদায় হানাদার মুক্ত দিবস পালিত

কুড়িগ্রামে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে ৬ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত দিবস। এ দিবস পালন উপলক্ষ্যে সকালে হানাদার মুক্ত দিবসের বিজয় মিছিল,পুস্প্যমাল্য অর্পন ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ মূলক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। জানা যায়, ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম হানাদার মুক্ত হয়। এই দিন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল চাপের মুখে পাকিস্তানি সেনারা পরাজয় মেনে নিয়ে কুড়িগ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়। ৬ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম হানাদার মুক্ত দিবস। কোম্পানি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুল হাই সরকার বীর প্রতীকের নেতৃত্বে কুড়িগ্রাম ওভারহেড পানির টাংকির উপর প্রথম স্বাধীনতার বিজয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।
এই দিবসের শুরুতে সকাল ৯ টায় একটি বিজয় মিছিল কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স হতে বেড় হয়ে শহর পদক্ষিন করে। পরে কলেজ মোড় স্বাধীনতার বিজয় স্থম্ভে পুস্প্য মাল্য অর্পণ করে। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জেলা আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নুরুজ্জামানের সভাপতিত্বে এবং সদর কমান্ডের আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুল বাতেন সরকারের সঞ্চালনায় এক স্মৃতি চারণ মূলক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।এতে বক্তব্য রাখেন,অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ মাসুদ রানা,কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইসমাইল হোসেন,এনডিসি এবিএম মেজবাহ উদ্দিন,সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ হাবিবুল্যা, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুল হাই সরকার (বীর প্রতীক), বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর আব্দুস সালাম(অবঃ), বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন অর রশিদ,প্রবীন সাংবাদিক সফি খান,মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড কুড়িগ্রাম জেলা সভাপতি মাহবুবুর রশীদ তালুকদার স্বপন,সহ সভাপতি নব কুমার সরখেল ববি,সাধারণ সম্পাদক আমানুর রহমান খোকন,উদীচী শিল্পিগোষ্ঠির অনিরুদ্ধ প্রণয় প্রান্তিক,১৯ সংগঠনের রাজ্য জ্যোতি,জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম সদস্য সচিব হেলাল আহমেদ,প্রাথমিক সহকারি শিক্ষক সমিতির সদস্য সচিব আব্দুল মুমিন বাবু প্রমুখ ।

জাবিতে সিরাজগঞ্জ জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতির সভাপতি-সম্পাদক তাড়াশের মাসুদ ও মোন্নাফ

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ প্রকাশিত: রবিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১১:৪৬ এএম
জাবিতে সিরাজগঞ্জ জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতির সভাপতি-সম্পাদক তাড়াশের মাসুদ ও মোন্নাফ

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) অধ্যয়নরত সিরাজগঞ্জ জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতির নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। সদ্য গঠিত কমিটিতে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০তম আবর্তনের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী ও তাড়াশ উপজেলার তালম ইউনিয়নের কৃতী শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আব্দুল মোন্নাফ। একই সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী, তাড়াশের নাদোসৈয়দপুর গ্রামের মাসুদ রানা।

বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক অনুষ্ঠানে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। দায়িত্বগ্রহণের পর খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ করা হবে বলে জানান নবনির্বাচিত সভাপতি ও সম্পাদক।

সংগঠনের কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে সভাপতি শাহরিয়ার আব্দুল মোন্নাফ বলেন, “প্রতিবারের মতো এবারও সিরাজগঞ্জ থেকে আগত শিক্ষার্থী ও ভর্তি পরীক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে। ইনশাআল্লাহ, সংগঠনের কার্যক্রমে নতুন মাত্রা যোগ করে আমরা আরও নতুনত্বের প্রকাশ ঘটাবো।”

নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা বলেন, “সিরাজগঞ্জ জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া আমার জন্য এক বিশেষ সম্মান। এই বিশ্বাস ও ভালোবাসাকে শক্তি হিসেবে নিয়ে আমরা সমিতিকে আরও সংগঠিত, কার্যকর ও শিক্ষার্থীবান্ধব একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে তুলব। আগামী দিনে সিরাজগঞ্জের শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা, মেধাবী শিক্ষার্থীদের সহায়তা এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের ক্যাম্পাসের সম্পর্ক জোরদার করাকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করে যাব।”

নতুন কমিটি ঘোষণায় জাবির সিরাজগঞ্জের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।