চতুর্দিকে মৃত্যুফাঁদ

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় মেট্রোরেলের পিলারের বিয়ারিং প্যাড খুলে এক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনার পর অনেকের আলোচনাতেই ঘুরে ফিরে আসছে- এই শহরে কে কখন কোন ধরনের দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাবে-তার নিশ্চয়তা কোথায়?
সামাজিক মাধ্যমে অনেকে বিভিন্ন সময়ে এমন মৃত্যুর ঘটনা তুলে ধরে লিখছেন- এই শহরে কারও ওপর বিয়ারিং প্যাড পড়ে, কেউ ওপর থেকে ইট পড়ে, কেউ অটোরিকশার ধাক্কায়, কেউ ময়লার গাড়ীর ধাক্কায়, কেউ বা দুই বাসের চিপায় পড়ে মারা যাচ্ছে।
এমনকি স্কুলের ওপর বিমান বিধ্বস্ত হয়ে শিক্ষার্থী-শিক্ষকের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে এই ঢাকাতেই।
এসব ঘটনার কথা উল্লেখ করে সামাজিক মাধ্যমে কেউ লিখছেন ‘এই শহরে মানুষের জীবনই সবচেয়ে সস্তা’, আবার কেউ লিখছেন ‘ঢাকা শহরে জীবনের কোনো দাম নেই। যখন তখন উধাও হয়ে যেতে পারে’।
সমাজ বিশ্লেষক ও নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনাগুলো কোনো দুর্ঘটনা নয়, বরং ‘ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতা জনিত হত্যাকাণ্ড’।
তাদের মতে, যাদের ব্যর্থতা বা দায়িত্বে অবহেলার জন্য এসব ঘটে তাদের কখনোই কোনো শাস্তি হয় না বলেই এসব ঘটনা ঘটেই চলেছে।
তারা বলছেন, দায়িত্বে অবহেলা এমন পর্যায়ে গেছে যে ফ্লাইওভার থেকে প্রকাশ্যে দিবালোকে নাটবল্টু খুলে নেয়ার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরেও কাউকে এসব নিয়ে সক্রিয় হতে দেখা যায় না।
এদিকে ঢাকায় মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে নিহত আবুল কালামের জানাজা শেষে আজ তাকে শরিয়তপুরের নড়িয়ায় দাফন করা হয়েছে।
বিয়ারিং প্যাডে মৃত্যু
আবুল কালাম তার নারায়ণগঞ্জের বাসা থেকে মতিঝিলে এসেছিলেন সোমবার সকালে। এরপর কাজের প্রয়োজনে এসেছিলেন ফার্মগেট এলাকায়। সেখানেই ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় মেট্রোরেলের পিলারের বিয়ারিং প্যাড পড়ে তার মৃত্যু হয়।
ছয় বোন ও চার ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোটো আবুল কালাম নিজেও দুই সন্তানের পিতা ছিলেন। তার মৃত্যুর খবর মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায় সামাজিক মাধ্যমে। এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ দেখা দেয় অনেকের মধ্যে।
এ ঘটনার পর মেট্রোরেলের পিলার থেকে বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ার কারণ অনুসন্ধানে একটি কমিটি গঠন এবং নিহতের পরিবারকে ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে সরকার।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এভাবেই প্রতিটি ঘটনার পর হয় তদন্ত কমিটি না হয় টুকটাক ক্ষতিপূরণ দিয়ে ঘটনাগুলোকে ধামাচাপা দেয়া হয়।

















