রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

হতাশ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ

অন্তর্বর্তী সরকারের ১৪ মাসে মেলেনি অনেক হিসাব

ডেস্ক নিউজ
ডেস্ক নিউজ প্রকাশিত: শনিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৫, ৫:১৭ পিএম | 104 বার পড়া হয়েছে
অন্তর্বর্তী সরকারের ১৪ মাসে মেলেনি অনেক হিসাব

গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের সাড়ে ১৪ মাস পেরিয়ে গেলেও কাঙ্ক্ষিত সাফল্য ও প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন নিয়ে জনমনে তৈরি হয়েছে এক গভীর হতাশা। দুর্নীতি দমন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, প্রশাসনিক দক্ষতা, আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি — সব ক্ষেত্রেই প্রত্যাশা ও বাস্তবতার মধ্যে রয়ে গেছে বিস্তর ব্যবধান। রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সাংবাদিক, নারী অধিকারকর্মীসহ সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ মনে করছেন— সময় যত যাচ্ছে, ততই দৃশ্যমান হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মদক্ষতার সীমাবদ্ধতা।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ১৪ মাসে ১৩টি দেশে ১৪টি সফর সম্পন্ন করেছেন। কিন্তু এসব সফর দেশের অর্থনীতি, বাণিজ্য কিংবা কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে কতটা অবদান রেখেছে — তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। বিশেষ করে তার সর্বশেষ রোম সফর নিয়ে সমালোচনার ঝড় তুলেছে সামাজিক ও রাজনৈতিক মহল।

রোম সফরে তিনি আসলে কী অর্জন করেছেন, সেটি নিয়ে বিতর্ক চলছে। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন— প্রোটোকল অনুযায়ী রোম মেয়রের অফিসে গিয়ে বৈঠকে অংশ নেওয়ার প্রয়োজন ছিল কি না? সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন,“একটি দেশের শীর্ষ নেতার ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়াটা কতটা জরুরি? এটা কোনো দ্বিপাক্ষিক সফর ছিল না, বরং বহুপাক্ষিক আয়োজন। অথচ দেশের ভেতরে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে যা প্রধান উপদেষ্টার মনোযোগ দাবি করে।”

দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা দিয়েছিলেন, “আমাদের সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নেবে, এবং সব উপদেষ্টা দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পদের হিসাব প্রকাশ করবেন।”

কিন্তু ১৪ মাস পেরিয়ে গেলেও সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। এখনো কোনো উপদেষ্টার সম্পদ বিবরণ জনসমক্ষে প্রকাশিত হয়নি।

সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন,“ঘটনাটা অনেকটা শেখ হাসিনার সময়কার মতো হয়ে গেছে। সেসময়ও প্রতিশ্রুতি ছিল, মন্ত্রীরা সম্পদের তথ্য প্রকাশ করবেন — কিন্তু তা হয়নি। আমরা আশা করেছিলাম অন্তর্বর্তী সরকার নতুন এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে, কিন্তু হতাশ হয়েছি।”

তবে প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহমেদ দাবি করেন,“অধিকাংশ উপদেষ্টা ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাদের সম্পদের হিসাব জমা দিয়েছেন। বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন, সময়মতো জনগণ জানতে পারবে।”

অভ্যুত্থানের পর থেকেই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার নানা পদক্ষেপ নিলেও মাঠপর্যায়ে চিত্র ভিন্ন। বরং বেশ কয়েকটি নৃশংস ও চাঞ্চল্যকর ঘটনা জনমনে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাগুলোর একটি— রাজবাড়ির গোয়ালন্দে ধর্মীয় নেতা নুরুল হক ওরফে ‘নুরাল পাগলার’ মরদেহ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে ফেলা। ধর্মীয় উসকানি, প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তা ও বিচারহীনতার এই ঘটনা আন্তর্জাতিক পরিসরেও ব্যাপক সমালোচিত হয়।

পুলিশ সদর দপ্তরের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দাবি করা হয়েছে—“২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত দেশে ডাকাতি হয়েছে ৬১০টি, খুন ৩,৫৫৪টি, ধর্ষণ ৪,১০৫টি এবং নারী-শিশু নির্যাতন ১২,৭২৬টি। গুরুতর অপরাধের প্রবণতা ‘স্থিতিশীল’ রয়েছে।”

কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিসংখ্যান আসলে মাঠের বাস্তবতা আড়াল করছে। পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) আশরাফুল হুদা বলেন,“যতটা উন্নতি হওয়ার কথা ছিল, ততটা হয়নি। পুলিশের মনোবল পুনরুদ্ধারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। নির্বাচিত সরকার না এলে এই পরিস্থিতির উন্নতি কঠিন।”

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে আশাবাদের পরিবর্তে তৈরি হয়েছে নতুন শঙ্কা। সুপ্রিমকোর্টের প্রবীণ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন,“আইন আছে, কিন্তু আইনের শাসন নেই। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা যখন বলেন ‘জামিন না দেওয়ার’ নির্দেশ দেওয়া হবে, তখন বোঝা যায়— বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কোথায় নেমে গেছে।”

অন্যদিকে সিনিয়র আইনজীবী সাইদ আহমেদ রাজা মনে করেন,“২০২৪ সালের মে-জুনের পর যে আগুনে সারাদেশ পুড়েছিল, তা বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট করেছে। বরং এখন দেখা যাচ্ছে— বিচারপতি ও আইন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এতে বিচার ব্যবস্থা আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে।”

রাজনৈতিক অস্থিরতা ও প্রশাসনিক অদক্ষতার কারণে সরকার এখন নানামুখী চাপের মুখে। নির্বাচন সামনে রেখে যে সংস্কার প্রত্যাশিত ছিল— তা এখনো দিগন্তে দেখা যাচ্ছে না। দেশের অর্থনীতি, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও নিরাপত্তা— প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তার ছায়া।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বছরটিতে যে উদ্যম ও প্রত্যাশা দেখা গিয়েছিল, তা ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয়েছে। একদিকে প্রশাসনিক জট, অন্যদিকে নেতৃত্বের অভাব— সব মিলিয়ে সরকার এখন এক কঠিন বাস্তবতার মুখে দাঁড়িয়ে।

সাধারণ মানুষ ভেবেছিল দুর্নীতিমুক্ত, মানবিক ও স্বচ্ছ শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা হবে। কিন্তু ১৪ মাস পর সেই প্রত্যাশা এখন পরিণত হয়েছে হতাশায়। নারী অধিকারকর্মী, শ্রমিক প্রতিনিধি, শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকেও শোনা যাচ্ছে একই সুর—

“বদল এসেছে কেবল মুখে, মাঠে নয়।”

১৪ মাসের পথচলায় অন্তর্বর্তী সরকার কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিলেও, দুর্নীতি দমন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, আইন-শৃঙ্খলা, অর্থনীতি ও স্বচ্ছতা— সব ক্ষেত্রেই অর্জনের চেয়ে প্রশ্ন বেশি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, “যে সরকার গণঅভ্যুত্থানের দাবিতে গঠিত হয়েছিল, তাদের সামনে এখন একটাই চ্যালেঞ্জ— জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করা।”

অন্তর্বর্তী সরকারের ১৪ মাসের হিসাব কেবল পরিসংখ্যান নয়, এটি জাতির প্রত্যাশা ও হতাশার এক প্রতিচ্ছবি। দায়িত্বশীলতা, জবাবদিহি ও রাজনৈতিক সততার পুনঃপ্রতিষ্ঠাই এখন সময়ের দাবি।

সুলেখা আক্তার শান্তা

আলোছায়ার পথ

সুলেখা আক্তার শান্তা প্রকাশিত: রবিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৪:২৪ পিএম
আলোছায়ার পথ

এক রোদেলা দুপুর। অফিসে নিজের কাজে মগ্ন ছিল নাফিজা। হঠাৎ চোখ তুলতেই দেখে সহকর্মী রিফাত গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। নাফিজা মুহূর্তে থমকে যায়। মনে মনে ভাবতে থাকে, এভাবে তাকিয়ে আছে কেন? সে অস্বস্তি ঢাকতে টেবিলের উপর কলম দিয়ে টুং টাং শব্দ করে। রিফাত মাথা ঝাঁকিয়ে হেসে ফেলে। ইশারায় নাফিজা জানতে চায়, কী হয়েছে? রিফাত হেসে বলে, কিছু না। অফিসে তাদের টেবিল পাশাপাশি। কিন্তু তেমন কথা হয় না।
পরদিন টেবিলে বসেই নাফিজা দেখে একটি সতেজ সবুজ পাতা, হালকা কুড়ানো, যেন টেবিলের উপর রেখে যাওয়া এক নিঃশব্দ বার্তা। প্রথমে ভেবেছিল, বাতাসে এসে পড়েছে। কিন্তু পরপর কয়েকদিন একইরকম পাতা দেখে। নাফিজা পিয়ন দুলালকে ডাকে, এই পাতা তুমি রাখো?
দুলাল অবাক, না ম্যাডাম, আমি জানিনা!
তাহলে কে?
দুই হাত প্যান্টের পকেটে, চোখে একরাশ উদ্বেগ নিয়ে রিফাত এগিয়ে এলো নাফিজার দিকে। সে হাসিমুখে বলল, এই পাতা কে রাখে ভাবছো?
হ্যাঁ।
জানতে চাও?
জানতে চাই? কিন্তু বুঝে উঠতে পারছি না কে রাখে।
রিফাত একটু থেমে বলল, অফিস শেষে বের হয়ে বলবো।
সন্ধ্যার আলোয় দুজনে হাঁটছে পাশাপাশি। হঠাৎ রিফাত থেমে বলল, এই পাতাটা যতক্ষণ জীবনের রস ধরে রাখতে পারে, ততক্ষণ সতেজ থাকে। ঠিক সেরকম, যতক্ষণ তুমি আমার দৃষ্টির সীমানায় থাকো, আমি সতেজ থাকি। আর তুমি যখন চোখের আড়ালে যাও… আমি ও পাতার মতো শুকিয়ে যাই। তুমি আড়ালে গেলে ঠিক এই শুকনো পাতার মতো আমি। প্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলি।
নাফিজা বিস্ময়ে হয়ে বলে, বা! আমি কারো প্রাণশক্তি? রিফাত হেসে ওঠে, তোমাকে না দেখলে আমি প্রাণহীন হয়ে পড়ি। এটুকুতেই সমস্ত অপ্রকাশিত অনুভূতির ঢেউ আছড়ে পড়ে নাফিজার মনে।
পরদিন অফিসে টেবিলে সে একটি পাতা দেখে, রিফাতের দিকে তাকায়, এবার তার ঠোঁটে হালকা এক হাসি। দুজনে মাঝে মাঝেই চোখে চোখ রাখে, শব্দহীন ভালোবাসার ভাগাভাগি।
সন্ধ্যায় রাস্তার মোড়ে দিয়ে দু’জনে হেঁটে যাচ্ছিলো হঠাৎ রিফাত ধীরে বলে উঠলো, আমি তোমাকে ভালোবাসি নাফিজা। এক পলকের নীরবতা। নাফিজার কাছ থেকেও ভালোবাসার সম্মতি। উদার মনে বলে রিফাত, ভালোবাসা শুধু অনুভব নয়, তা দায়িত্বও বটে।
মাস তিনেক পর একদিন, রিফাত বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। নাফিজা একটু চমকে গিয়ে বলে, এখনি? বিয়ে তো করব, তবে পরিবারের সম্মতি ছাড়া নয়। পরিবারকে জানিয়ে। ঠিক আছে পরিবারকে জানিয়েই বিয়ে হবে। আমি আমার দিকে বলবো তুমি তোমার দিকে বলো। আমার তো শুধু মা আছে, বলে নাফিজা। ঠিক আছে তুমি তাঁকে জানাও।
দুজনই পরিবারের সম্মতি নেয়। নাফিজার মা রেবেকা বলেন, যদি তোমরা একে অপরকে বিয়ে করতে চাও, ঠিক আছে। আশীর্বাদ রইলো।
বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হয়। নাফিজা সবকিছুর প্রস্তুতি নিজেই নিচ্ছিল। নাফিজা তার মায়ের একমাত্র মেয়ে সবকিছু তার নিজেরেই করতে হয়। স্বপ্ন তার বাস্তব হবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন ভেঙে যায় এক অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায়। মার্কেট থেকে ফেরার পথে, হঠাৎ একটি গাড়ি ধাক্কা দেয় নাফিজাকে। রাস্তায় রক্তে ভেসে যায় তার স্বপ্ন। আর পথচারীরা ছুটে নিয়ে যায় নাফিজাকে হাসপাতালে। চিকিৎসা চলে। অনেক চেষ্টা করেও ভালো করা যায় না তার একটা পা। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা নাফিজা চোখ মেলে দেখে, রিফাত পাশে দাঁড়িয়ে। সে হাত ধরে বলে, তোমার কিছুই হয়নি নাফিজা। তুমি এখনো সেই মানুষ, যাকে দেখলে আমার মন আনন্দে থাকে। পা থাক বা না থাক, তাতে কি আসে যায়?
হাসপাতালের বিছানায় নিস্তব্ধ শুয়ে থাকা মেয়েকে দেখে রেবেকা ভেঙে পড়েন। দু’চোখ দিয়ে ঝরে পড়া অশ্রুর সঙ্গে কণ্ঠ ফেটে বেরিয়ে আসে হৃদয়ের আর্তনাদ। আমার মেয়ের এমন কেন হলো আল্লাহ্? এখন আমি কীভাবে বাঁচব? আমার তো ও ছাড়া আর কেউ নেই! রিফাত চুপচাপ দাঁড়িয়ে, চোখে জল, কিন্তু মুখে স্থিরতা। সে ধীরে বলে, ভেঙে পড়বেন না মা। আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন। রেবেকা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, হ্যাঁ, তাঁরই উপর তো ভরসা আছে। এই কষ্ট কীভাবে সইব জানি না।
দীর্ঘ হাসপাতালে কাটানো দিন শেষে নাফিজাকে বাড়ি ফিরিয়ে আনা হয়। কিন্তু জীবন আর আগের মতো নেই। দেহে এখন এক পায়ের শূন্যতা, আর মনের কোণে বেদনার ঘূর্ণি। পঙ্গুত্বের কারণে চাকরি চলে যায়, সংসারের পথ আরও কঠিন হয়ে পড়ে। রেবেকা অসহায় হয়ে ভাবেন। মেয়ের কী হবে! কে হবে আশ্রয়? এই বাস্তবতার মুখে কেমন করে চলবে দিন?
নাফিজা–রিফাত যখন একসাথে সুখের স্বপ্ন বুনছিল, তখনই এক কালো মেঘ এসে ঢেকে দিলো তাদের আকাশ। রিফাত পরিবারের কাছে বলে, আমি নাফিজাকে বিয়ে করতে চাই। বাবা, মোহন খান শব্দের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বললেন, পঙ্গু মেয়েকে ঘরের বউ করা যাবে না। ওর তো চাকরিও নেই এখন। তুমি ওর জীবন থেকে সরে দাঁড়াও, ওর বোঝা আমাদের ঘাড়ে তুলে নিব কেন? রিফাত বলল, বাবা, এমন স্বার্থপর কেন হচ্ছেন? ভালোবাসা তো দয়া নয়। আমি নাফিজাকে ভালোবাসি ওর দেহকে নয় ওর মানসিকতাকে। মোহন খান ধমকের স্বরে বললেন, তর্ক করো না! আমার চোখের সামনে থেকে চলে যাও।
রিফাত নাফিজার সামনে হাজির হয়। কিন্তু কণ্ঠে স্থিরতা, বলল রিফাত, নাফিজা আমরা বিয়ে করব। নাফিজা একটু থেমে, মুখ ঘুরিয়ে বলে, রিফাত, তুমি এখন বিয়ে করতে চাও, সেটা করুণা। আমি কারো করুণা চাই না। রিফাত হতভম্ব হয়ে বলল, করুণা? ভালোবাসা করুণার নয় একটি সম্মানের সম্পর্ক। তোমাকে ভালোবাসি, সম্মান করি। তুমি আজও আমার প্রাণশক্তি, আমার জীবন। নাফিজা গম্ভীর গলায় বলে, তোমার পরিবার যখন আমায় গ্রহণ করছে না, তখন তুমি কীভাবে এই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখবে? রিফাত নিঃশ্বাস ফেলে বলে, আমি তোমাকে ছুড়ে ফেলতে ভালোবাসি নেই। তোমাকে ভালোবেসেছি আমার জীবন সাথী হিসেবে পাওয়ার জন্য। তোমাকে ছেড়ে যাওয়া মানে আমার আত্মাকে অস্বীকার করা। তোমার পাশে থাকব এই দুঃসময়ে এটা দায়িত্ব নয়, এটাই আমার ভালোবাসা। রেবেকা পাশে দাঁড়িয়ে সব শুনছিলেন। মুগ্ধ হয়ে মেয়েকে বলেন, মা, ছেলেটা সত্যিই ভালো। এমন ভালোবাসা জীবনে খুব কম পাওয়া যায়। ওকে গ্রহণ কর মা। মা রেবেকার চোখে জল, কিন্তু তাতে আনন্দের ঝিলিক। ও তোকে ভালোবাসে মা। এমন ছেলে ভাগ্যে কজনের জোটে? তুই ওকে গ্রহণ কর, সে তো তোকে হারাতে চায় না। নাফিজার চোখে তখন ভীষণ প্রশান্তি। রিফাতের ভালোবাসা, তার সংকল্প, তার সমস্ত দুর্বলের ওপর এক অটল আশ্রয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে রিফাতের হাত ধরে বলে, আমি চাই… আমি চাই তোমার সঙ্গে বাকি জীবনটা কাটাতে। নাফিজার মুখে এ কথা শোনার পর রিফাতের যেন এক অচিন্তনীয় উচ্ছ্বাস। সে নিজেই বিয়ের সমস্ত আয়োজন করে। শাড়ি থেকে অলঙ্কার, নিজে হাতে ফুল দিয়ে বাসর ঘর সাজিয়ে তোলে।
বিয়ের দিনে, যখন ঘোমটার আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো নাফিজা, রিফাত নিঃশ্বাস আটকে তাকিয়ে থাকে। “মাশা’আল্লাহ! কী অপূর্ব লাগছে তোমায়।” দুজন মধুময় বাসরে রাত কাটায়, নয়নজুড়ে স্নিগ্ধ ভালোবাসা আর হৃদয়ে অটুট প্রতিশ্রুতি।
বিয়ের কিছুদিন পর হঠাৎ একদিন… মোহন খান সোজা এসে দাঁড়ান রিফাতের সামনে, চোখে স্নিগ্ধতা। আমার বউমাকে নিয়ে যেতে এসেছি, বলেন তিনি নিঃশব্দ গলায়। চলো বাবা, বউমাকে নিয়ে ঘরে। রিফাত এক মুহূর্ত স্তব্ধ, চোখ ঝলমলিয়ে ওঠে আনন্দে। সে ধীরে নাফিজার দিকে এগিয়ে যায়। হাত ধরে বলে, চলো, আমার ঘরের আলো। নাফিজা এক বিন্দু অশ্রু নিয়ে বলে, আজ নিজেকে বড় ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে। যে ভালোবাসা আমি পেয়েছি, তা কল্পনারও বাইরে। ঘরভর্তি আনন্দ, চোখভর্তি স্বপ্ন, জীবনে যেন বসন্তের পুণর্জন্ম। তাদের সংসার হয়ে ওঠে ভালোবাসার ঠিকানা।
নাফিজার মনে এক গভীর প্রশান্তি। যে জীবন থেমে যেতে পারতো, সেই জীবনই এখন বেঁচে আছে এক অনন্য ভালোবাসার উচ্ছ্বাসে। আমি ভাগ্যবতী, কারণ এমন একজন মানুষকে পেয়েছি, সে আমার পাশে ছায়া মতো দাঁড়িয়ে আছে। সম্পর্ক টিকে সম্মান, ভালোবাসা আর পারস্পরিক আস্থার উপর। সব ভালোবাসা পূর্ণতা পাক। থাক বিশ্বাস, সম্মান আর ভালোবাসার মলাটে বাঁধা।

ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মো: আব্দুল আজিজ

ভাঙ্গুড়ায় বেগম খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মো: আব্দুল আজিজ প্রকাশিত: রবিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২:৩৩ পিএম
ভাঙ্গুড়ায় বেগম খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

পাবনার ভাঙ্গুড়ায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী পল্লী চিকিৎসক এ্যাসোসিয়েশনের ভাঙ্গুড়া উপজেলা শাখার উদ্যোগে বিএনপির চেয়ারপার্সন সাবেক সফল প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার দুপুরে উপজেলার বিএনপি কার্যালয়ে এ দোয়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে উপজেলা পল্লী চিকিৎসক দলের সভাপতি মোঃ আব্দুল মান্নান মিয়ার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ আরিফুল ইসলাম স্বপনের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও পাবনা জেলা পল্লী চিকিৎসক দলের সভাপতি মোঃ ফারুক খান হিমেল,অনুষ্ঠানের উদ্বোধক ভাঙ্গুড়া উপজেলা বিএনপির আহব্বায়ক নুর মোজাহিদ স্বপন,প্রধান বক্তা হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ভাঙ্গুড়া পৌর বিএনপির সভাপতি মোঃ রফিকুল ইসলাম,আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্হিত ছিলেন পাবনা জেলা পল্লী চিকিৎসক দলের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আলহাজ্ব খান,সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আবু সাইদ,বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন,উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহব্বায়ক মোঃ আব্দুল আজিজ,যুগ্ম আহব্বায়ক মোঃ বরাত আলী, আবু হেনা মোস্তফা কামাল রেজা,আলতাব হোসেন,পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ সাইদুল ইসলাম বুরুজ, পল্লী চিকিৎসক দলের ইশ্বরদী উপজেলা শাখার সভাপতি জুয়েল সরকার,আটঘরিয়া উপজেলা শাখার সভাপতি আমিনুল ইসলাম,উপজেলা সেচ্ছাসেবক দলের আহব্বায়ক মোঃ হুমায়ুন কবির প্রমুখ৷

আলোচনা শেষে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় বিশেষ মোনাজাত ও পরে ভাঙ্গুড়া উপজেলা পল্লী চিকিৎসক এ্যাসোসিয়েশনের অনুমোদিত ২১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির কাগজ নব-নির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের হাতে তুলে দিয়ে ফুলের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মো: আব্দুল আজিজ

নির্বাহী সম্পাদকঃ অঞ্জনা চৌধুরী

কাজিপুর উপজেলায় যমুনা নদীতে নতুন চর জেগে ওঠায় নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে

নির্বাহী সম্পাদকঃ অঞ্জনা চৌধুরী প্রকাশিত: রবিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১২:০২ পিএম
কাজিপুর উপজেলায় যমুনা নদীতে নতুন চর জেগে ওঠায় নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে

সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলায় যমুনা নদীতে নতুন চর জেগে ওঠায় নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে, যা মনসুরনগর চরের শিক্ষার্থীদেরসহ স্থানীয়দের যাতায়াতে চরম ভোগান্তি সৃষ্টি করছে; বিশেষ করে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে ও স্কুলে যেতে তাদের ডুবোচরের উপর দিয়ে হেঁটে যেতে হচ্ছে, যা একটি বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে।
মূল সমস্যা: শুষ্ক মৌসুমে জেগে ওঠা অসংখ্য ডুবোচর যাতায়াতে বাধা দিচ্ছে।
প্রভাব: ছাত্রছাত্রী, রোগীসহ সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
উদাহরণ: মনসুরনগর চরের লোকজন কাজিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে ও শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যেতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।