সোমবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
সোমবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

অন্য রকম তারেক রহমান

ডেস্ক নিউজ
ডেস্ক নিউজ প্রকাশিত: বুধবার, ৮ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:০৫ পিএম | 100 বার পড়া হয়েছে
অন্য রকম তারেক রহমান

👉প্রায় ১৭ বছর পর #গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিতে দেখা গেল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত #চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে। এর আগে টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় তিনি তার দলের নেতৃত্বের শীর্ষে যেমন ছিলেন না, তেমনি অভিজ্ঞতার ঝুলিটাও এতটা সমৃদ্ধ ছিল না। আজকের মতো অনির্ধারিত প্রশ্নোত্তর, ১৭ বছরের লম্বা বিরতি, জমে থাকা হাজারো প্রশ্ন, বিব্রতকর জিজ্ঞাসা, ব্যক্তিগত পারিবারিক তথ্যানুন্ধান সুদীর্ঘ কথোপকথন এসব কিছুর মুখোমুখি হয়ে কতটা সপ্রতিভ থাকতে পারবেন তিনি, সে জিজ্ঞাসা ছিল অনেকেরই। শুরুতে আড়ষ্টতা কিছুটা ছিল না তেমন বোধ হয় বলা যাবে না। তবে সময় যত গড়িয়েছে ততটাই স্বচ্ছন্দে তিনি সব প্রশ্ন সামলেছেন।
👉পুরোটা দেখে সেটাই মনে হয়েছে উত্তর দেওয়ার সময় তার মাঝে কোনো অস্পষ্টতা ছিল না। তিনি অন্তর দিয়ে যেটা বিশ্বাস করেন, সেটাই বলেছেন নির্দ্বিধায়, প্রচলিত #রাজনীতিতে অস্পষ্টতা রেখে, পরোক্ষ বা গা বাঁচানো উত্তর দেওয়াটাই যখন প্রায় প্রথাসিদ্ধ বলেই সবাই জানে। কোনো প্রশ্ন পাশ কাটানোর চেষ্টা করেছেন, এমনও নয়, কথা বলেছেন বলিষ্ঠ আত্মবিশ্বাসী অবস্থান থেকে, এটা তার অনুসারী, দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দীপ্ত করবে সন্দেহ নেই।
👉কথা বলার সময় তিনি যতটা না দলের #ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের অবস্থান থেকে কথা বলেছেন তার চেয়ে অনেক বেশি সচেষ্ট ছিলেন তার কথোপকথনে জাতীয় ঐক্যের সুরটা যেন আরো বেশি বলিষ্ঠ শোনা যায়। তার বক্তব্যের এই ধারা দেশের রাজনৈতিক সুস্থতার জন্য অনেক প্রয়োজনীয়। প্রতিপক্ষকে অনাবশ্যক আক্রমণের সুযোগ যেমন নেননি, ঠিক তেমনি ব্যক্তিগত প্রসঙ্গে এক সাধারণ মানুষের মতো ভদ্রোচিত অস্বস্তিতে ছিলেন, যেন তার কোনো কথাতেই আত্মম্ভরিতা বা অহংকার প্রকাশিত না হয়, শ্রোতা-দর্শকের কাছে তার এই অভিব্যক্তি নিশ্চয়ই নজর এড়াবে না। সাবেক রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর সন্তান, এমন সৌভাগ্যের সাথে জনগণকে তাচ্ছিল্য করার প্রচলিত সংস্কৃতির সাথে প্রায় অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া দর্শক-শ্রোতাকে আবারও সেই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়নি, সেটাও এই সাক্ষাৎকারে অন্যতম প্রাপ্তি।
👉তার দেশে ফেরা নিয়ে এত দিন যে প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে দলের নেতাকর্মীরা প্রায়ই অস্পষ্টতার আশ্রয় নিতেন আজকের সাক্ষাৎকারে তিনি নিজেই সেটা স্পষ্ট করেছেন অনেকটাই। বলেছেন, কিছু সংগত কারণে এখনো দেশে ফেরা হয়ে উঠেনি। এখন ফেরার সময় চলে এসেছে। দ্রুতই দেশে ফিরব #ইনশাআল্লাহ। সেই সংগত কারণের মধ্যে নিরাপত্তা ছাড়াও হয়তো এমন কিছু বিষয় রয়েছে, যেটা আমাদের মতো সাধারণের বোধের বিষয় নয়।
👉তবে তার বা #জিয়া পরিবারের নিরাপত্তার সাথে দেশের #স্বাধীনতা, #সার্বভৌমত্ব আর বাংলাদেশের খোল নলচে বদলে যাওয়ার মতো ঝুঁকি যে আছে সেটা সম্ভবত সাধারণের অজানা নয়। স্পষ্ট করে বলেছেন, নির্বাচনের সময় কেমন করে দূরে থাকব? নির্বাচনের সময় জনগণের সাথে, জনগণের মাঝেই থাকব ইনশাআল্লাহ।
👉 #জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মাস্টার মাইন্ড হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাননি, সবিনয়ে যথার্থই বলেছেন, ‘এখানে মাস্টার মাইন্ড কোনো ব্যক্তি বা দল নয়। দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণই গণ-অভ্যুত্থানের মাস্টার মাইন্ড। এই উপলব্ধি সর্বজনীন হলে আমরা জাতীয় ঐক্যের অনেক কাছাকাছি পৌঁছতে পারতাম।’
👉 পতিত স্বৈরাচারের বিষয়ে প্রশ্নের উত্তরে সাবলীলভাবে নিজের অবস্থান তুলে ধরেছেন, ‘নির্যাতনকারী প্রত্যেকের বিচার হতে হবে। এটা প্রতিশোধের বিষয় নয়। এটা ন্যায়ের কথা, আইনের কথা। দল হিসেবে #আওয়ামী লীগ অন্যায় করে থাকলে দেশের আইন অনুযায়ী তারও বিচার হতে হবে।’ এই স্পষ্ট কথাগুলো বলে তিনি আওয়ামী লীগকে নিয়ে তার দলের বিরুদ্ধে তথাকথিত প্রশ্রয় বা নমনীয়তা নিয়ে যে অভিযোগ বা অনুযোগ রয়েছে সেটার নিষ্পত্তি তিনি কোনো রাখঢাক ছাড়াই করে দিয়েছেন।
👉আগামী নির্বাচনে দলের প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে তিনি প্রচলিত গৎবাঁধা কথার বাইরে যেতে পেরেছেন সেটাও এই পরিবর্তিত #বাংলাদেশের জন্য নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ, ‘তাকেই মনোনয়ন দিতে চাই, যিনি তার এলাকার সমস্যা সম্পর্কে সচেতন। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, তরুণ, নারী, মুরব্বি, ছাত্র-ছাত্রী সবার সাথে যোগাযোগ আছে। জন সমর্থনকে যিনি তার সাথে রাখতে পারেন। আমরা দলের নেতৃত্ব নির্বাচন করছি না বরং এমন মানুষ খুঁজে বের করতে চাই যার প্রতি এলাকার মানুষের সমর্থন রয়েছে, শুধুমাত্র দলের সমর্থন নয়, এমন মানুষ।’ তার কথায় প্রচলিত রাজনীতির চলমান ধারার বাইরের কথাগুলো তার অন্তরের কথা হলে আগামীতে দলের প্রার্থী নির্বাচনে আমরা ‘প্রকৃত’ যোগ্য প্রার্থীর সমাগম দেখতে পাব, এমন প্রত্যাশা রাখতে চাই।
👉 #পারিবারিক ধারাবাহিকতায় উত্তরাধিকার সূত্রে তার রাজনৈতিক উত্তরণ কি না? এমন স্পর্শকাতর প্রশ্নেও অভিব্যক্তির ভাবান্তর না ঘটিয়ে স্বাচ্ছন্দেই বলেছেন, বাংলাদেশের প্রচলিত রজনৈতিক ধারায় মামলা, নির্যাতন, পারিবারিক বঞ্চনা এগুলো যেমন স্বাভাবিক পুরস্কার—সেগুলোর প্রতিটি পর্বই তার জীবনে এসেছে নির্মমভাবে। জেলযাত্রার আগে সুস্থ মা জেল থেকে ফিরেছেন মারণব্যাধি সাথে নিয়ে। বিনা চিকিৎসায় বিদেশে মৃত্যুবরণ করেছে একমাত্র ভাই। স্ত্রীকে বাংলাদেশে সম্মানজনক চিকিৎসা পেশায় সুযোগ বঞ্চিত হতে হয়েছে, একমাত্র কন্যা বঞ্চিত হয়েছে কৈশোর ও তারুণ্য থেকে। নিজে বঞ্চিত হয়েছেন নেতাকর্মী আর মায়ের সান্নিধ্য থেকে— এক দিন-দুই দিন নয়, পুরো দেড় যুগ। দূর প্রবাস থেকে চরম অসহায়ত্বে দর্শক হয়ে থেকেছেন যখন আশৈশব স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মায়ের অসম্মানজনক উচ্ছেদের শিকার হয়েছেন। আট হাজার কিলোমিটার দূর থেকে শুনেছেন কেমন চরম আক্রোশে সেই বাড়ি মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক অভিযাত্রায় তিনি যে জবরদখল করেননি সেটার ইতিহাসও সবার জানা। শুরু করেছেন তৃণমূলের কর্মী হিসেবে, তারপর ওয়ান-ইলেভেনের যন্ত্রণা সয়েছেন যখন দলের যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন।
👉#বিবিসির সাক্ষাৎকারে সম্মানের সাথে মা #খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক অপরিহার্যতার কথা তুলে ধরেছেন। সাক্ষাৎকারের অবিশিষ্টাংশ শুনতে পেলে হয়তো শেষের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনার সুযোগ থাকবে। তবে প্রচলিত রাজনৈতিক কদর্যতা, চরিত্রহনন আর অশ্লীল আক্রমণের বাইরে একটা শোভন সাক্ষাৎকারের স্মৃতি শ্রোতা-দর্শক অনেক দিনই মনে রাখবেন।
👉 #শেষকথা, একজন জাতীয় নেতার কাছে জনগণ যে আন্তরিকতা খুঁজতে চান তারেক রহমান সে প্রত্যাশার কাছাকাছি নিজেকে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন আন্তরিক। আর বিব্রতকর বা স্পর্শকাতর বলে এত দিন যে বিষয়গুলো নিয়ে আমরা অস্বস্তি বোধ করতাম তিনি সেগুলো এত পরিষ্কার আর প্রাঞ্জলভাবে উপস্থাপন করেছেন যে, প্রচলিত রাজনীতিতে আজ যাঁরা হেভিওয়েট তারা জনগণের মনের গভীরে স্থান নিতে চাইলে তাদের নিজেদের বদলাতেই হবে।

গোলজার রহমান ধামইরহাট (নওগাঁ) প্রতিনিধি

ধামইরহাটে মালিক বিহীন ফেনসিডিল উদ্ধার

গোলজার রহমান ধামইরহাট (নওগাঁ) প্রতিনিধি প্রকাশিত: রবিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৬:৩৫ পিএম
ধামইরহাটে মালিক বিহীন ফেনসিডিল উদ্ধার

নওগাঁর ধামইরহাটে মালিক বিহীন অবস্থায় নিষিদ্ধ ঘোষিত ভারতীয় নেশা জাতীয় মাদকদ্রব্য ফেনসিডিল ও কাশির সিরাপ আটক করা হয়েছে। আজ শনিবার রাত সাড়ে দশটার দিকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেন বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বিজিবি পত্নীতলা ব্যাটালিয়নের (১৪ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন পিবিজিএম।

বিজিবি সময়ের আলোকে জানায়, শনিবার রাতে সীমান্ত পিলার ২৬৮/৮ এস হতে আনুমানিক ২০০ গজ দূরত্বে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে, আলতাদিঘির পশ্চিম পাশে মালিক বিহীন অবস্থায় ১৪ বোতল ভারতীয় নেশা জাতীয় মাদকদ্রব্য ফেনসিডিল ও ৯ বোতল কাশির সিরাপ আটক করা হয়েছে।

বিজিবি আরও জানায়, চোরাকারবারীরা বিজিবির উপস্থিতি টের পেয়ে রাতের অন্ধকারে মাদকদ্রব্য ফেলে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। যার সিজার মূল্য নয় হাজার দুইশ টাকা।

 

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ

কুড়িগ্রামে শত্রুতার জেরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ প্রকাশিত: রবিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৬:৩২ পিএম
কুড়িগ্রামে শত্রুতার জেরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট

কুড়িগ্রাম সদরের মোগলবাসা ইউনিয়নে পৃর্ব শত্রুতার জেরে অগ্নিসংযোগ লুটপাটরের ঘটনায় প্রায় ৪ লক্ষাধিক টাকা ক্ষতিসাধন করার অভিযোগ উটেছে মোঃ মোখলেছ, মজিদুল,ইলিয়াস,মোজাম্মেল সহ একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।অভিযুক্তরা সদর উপজেলার মোগলবাসা ইউনিয়ের বাসিন্দা। এ ঘটনায় কুড়িগ্রাম সদর থানায় অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী আমিনা বেগম।

অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, মোগলবাসা ইউনিয়ের মােছাঃ আমিনা বেগম (৩৬), স্বামী- জাহিদুল ইসলাম, গ্রাম- মােগলবাসা মালভাদা, ডাকঘর: মালবাসা, উপজেলা: কুড়গ্রাম সদর, জেলা: কুড়গ্রাম থানায় হাজির হইয়া বিবাদী ১। মােখলেছ (৩৫), পিতা- গাজিউর রহমান, ২। রাজু (৫৬), পিতা- নুর ইসলাম ৩। মােজাম্মেল হক (৪০), পিতা- আজিজল, ৪। আল আমিন (২০), পিতা- গাজীউর রহমান, ৫। আক্কাছ হাসেন (২৫), পিতা- গফফার আলী, ৬। আবু তাহের (২৪), পিতা- গফফার আলী, ৭। গফ্ফার আলী (৫৫), ৮। গফযুর আলী (৫০), ৯। হারুন (৪৫), সরব পিতা- মৃত মনছের ১৩। ইলিয়াস (৪২), পিতা- আঃ কাদের, ১৪। মজিদুল (৩৭) পিতা- আঃ কাদের সব সাং- মােগলবাসা মালভাঙ্গা, আগে আমাদের এলাকার জনৈক জাহিদ হাসান বছির এর স্ত্রী সঙ্গে জনৈক আকাশের মধ্যে পরকিয়া সম্পর্কের কারনে বাছর মারা যায়। সই বিষয়ে কুড়িগ্রাম থানায় মামলা হয়। মামলাটি চলমান রয়েছে। উক্ত মামলায় আমার শন্তড় আসামী কোন আসামী নাই। উতক্ত জাহিদ হাসান বছির এর মারা যাওয়ার বিষয়কে কেন্দ্র করিয়া গত ইং ০৫/১২/২০২৫ ইং তারিখ ভাচুর করে ক্ষতি সাধন করে। বিবাদীগণ আমার ২টি গরু ৩টি ছাগল, ০২ ভরি ওজনের স্বনালংকার, নগদ ৪০,০০০/- যায়। ঘটনার বিষয় প্রতিবেশী লােকজনসহ স্বাক্ষী-১। হাফিজুল, পিতা- জাবেদ আলী, ২। মাইদুল মিয়া, পিতা- আক্বর আলী, ৩। সাহেব আলী, পিতা- অজ্ঞাত, সব সাং-মােগলবাসা মালভাঙ্গা, ডাকঘর: মােলবাসা, উপজেলা: কুড়িগ্রাম সদর, জেলা: কুড়িগ্রামগন সহ আরোও অনেকে দেখেন ও শোনে। পরের দিন ইং ০৬/১২/২০২৫ তাং দুপুর অনুমান ১২.০০ বাড়ীঘর পূুড়িয়া গিয়ে ঘর বাড়ীতে বসবারের মত পরিবেশ নাই।

ভুক্তভোগী মোছাঃ আমিনা বেগম জানায়,আমার স্বামী ঢাকায় থাকে।আমি তিন সন্তান নিয়ে বাড়ি থাকি।হঠাৎ আমার বাড়িতে ১০/১৫ জন লোক নিয়ে এসে হামলা আগুন জ্বালিয়ে দেয়।আগুনে বাড়ি পোড়া ছাড়াও নগদ প্রায় ৪ লাখ টাকার ক্ষয় ক্ষতি করে।বর্তমানে আমি তিন সন্তান নিয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে আছি।আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে নিরপেক্ষ বিচার চাই।

এ-বিষয়ে কুড়িগ্রাম সদর থানার অফিসার ইনচার্জ হাবিবুর রহমান বলেন,অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।

সুলেখা আক্তার শান্তা

আলোছায়ার পথ

সুলেখা আক্তার শান্তা প্রকাশিত: রবিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৪:২৪ পিএম
আলোছায়ার পথ

এক রোদেলা দুপুর। অফিসে নিজের কাজে মগ্ন ছিল নাফিজা। হঠাৎ চোখ তুলতেই দেখে সহকর্মী রিফাত গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। নাফিজা মুহূর্তে থমকে যায়। মনে মনে ভাবতে থাকে, এভাবে তাকিয়ে আছে কেন? সে অস্বস্তি ঢাকতে টেবিলের উপর কলম দিয়ে টুং টাং শব্দ করে। রিফাত মাথা ঝাঁকিয়ে হেসে ফেলে। ইশারায় নাফিজা জানতে চায়, কী হয়েছে? রিফাত হেসে বলে, কিছু না। অফিসে তাদের টেবিল পাশাপাশি। কিন্তু তেমন কথা হয় না।
পরদিন টেবিলে বসেই নাফিজা দেখে একটি সতেজ সবুজ পাতা, হালকা কুড়ানো, যেন টেবিলের উপর রেখে যাওয়া এক নিঃশব্দ বার্তা। প্রথমে ভেবেছিল, বাতাসে এসে পড়েছে। কিন্তু পরপর কয়েকদিন একইরকম পাতা দেখে। নাফিজা পিয়ন দুলালকে ডাকে, এই পাতা তুমি রাখো?
দুলাল অবাক, না ম্যাডাম, আমি জানিনা!
তাহলে কে?
দুই হাত প্যান্টের পকেটে, চোখে একরাশ উদ্বেগ নিয়ে রিফাত এগিয়ে এলো নাফিজার দিকে। সে হাসিমুখে বলল, এই পাতা কে রাখে ভাবছো?
হ্যাঁ।
জানতে চাও?
জানতে চাই? কিন্তু বুঝে উঠতে পারছি না কে রাখে।
রিফাত একটু থেমে বলল, অফিস শেষে বের হয়ে বলবো।
সন্ধ্যার আলোয় দুজনে হাঁটছে পাশাপাশি। হঠাৎ রিফাত থেমে বলল, এই পাতাটা যতক্ষণ জীবনের রস ধরে রাখতে পারে, ততক্ষণ সতেজ থাকে। ঠিক সেরকম, যতক্ষণ তুমি আমার দৃষ্টির সীমানায় থাকো, আমি সতেজ থাকি। আর তুমি যখন চোখের আড়ালে যাও… আমি ও পাতার মতো শুকিয়ে যাই। তুমি আড়ালে গেলে ঠিক এই শুকনো পাতার মতো আমি। প্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলি।
নাফিজা বিস্ময়ে হয়ে বলে, বা! আমি কারো প্রাণশক্তি? রিফাত হেসে ওঠে, তোমাকে না দেখলে আমি প্রাণহীন হয়ে পড়ি। এটুকুতেই সমস্ত অপ্রকাশিত অনুভূতির ঢেউ আছড়ে পড়ে নাফিজার মনে।
পরদিন অফিসে টেবিলে সে একটি পাতা দেখে, রিফাতের দিকে তাকায়, এবার তার ঠোঁটে হালকা এক হাসি। দুজনে মাঝে মাঝেই চোখে চোখ রাখে, শব্দহীন ভালোবাসার ভাগাভাগি।
সন্ধ্যায় রাস্তার মোড়ে দিয়ে দু’জনে হেঁটে যাচ্ছিলো হঠাৎ রিফাত ধীরে বলে উঠলো, আমি তোমাকে ভালোবাসি নাফিজা। এক পলকের নীরবতা। নাফিজার কাছ থেকেও ভালোবাসার সম্মতি। উদার মনে বলে রিফাত, ভালোবাসা শুধু অনুভব নয়, তা দায়িত্বও বটে।
মাস তিনেক পর একদিন, রিফাত বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। নাফিজা একটু চমকে গিয়ে বলে, এখনি? বিয়ে তো করব, তবে পরিবারের সম্মতি ছাড়া নয়। পরিবারকে জানিয়ে। ঠিক আছে পরিবারকে জানিয়েই বিয়ে হবে। আমি আমার দিকে বলবো তুমি তোমার দিকে বলো। আমার তো শুধু মা আছে, বলে নাফিজা। ঠিক আছে তুমি তাঁকে জানাও।
দুজনই পরিবারের সম্মতি নেয়। নাফিজার মা রেবেকা বলেন, যদি তোমরা একে অপরকে বিয়ে করতে চাও, ঠিক আছে। আশীর্বাদ রইলো।
বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হয়। নাফিজা সবকিছুর প্রস্তুতি নিজেই নিচ্ছিল। নাফিজা তার মায়ের একমাত্র মেয়ে সবকিছু তার নিজেরেই করতে হয়। স্বপ্ন তার বাস্তব হবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন ভেঙে যায় এক অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায়। মার্কেট থেকে ফেরার পথে, হঠাৎ একটি গাড়ি ধাক্কা দেয় নাফিজাকে। রাস্তায় রক্তে ভেসে যায় তার স্বপ্ন। আর পথচারীরা ছুটে নিয়ে যায় নাফিজাকে হাসপাতালে। চিকিৎসা চলে। অনেক চেষ্টা করেও ভালো করা যায় না তার একটা পা। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা নাফিজা চোখ মেলে দেখে, রিফাত পাশে দাঁড়িয়ে। সে হাত ধরে বলে, তোমার কিছুই হয়নি নাফিজা। তুমি এখনো সেই মানুষ, যাকে দেখলে আমার মন আনন্দে থাকে। পা থাক বা না থাক, তাতে কি আসে যায়?
হাসপাতালের বিছানায় নিস্তব্ধ শুয়ে থাকা মেয়েকে দেখে রেবেকা ভেঙে পড়েন। দু’চোখ দিয়ে ঝরে পড়া অশ্রুর সঙ্গে কণ্ঠ ফেটে বেরিয়ে আসে হৃদয়ের আর্তনাদ। আমার মেয়ের এমন কেন হলো আল্লাহ্? এখন আমি কীভাবে বাঁচব? আমার তো ও ছাড়া আর কেউ নেই! রিফাত চুপচাপ দাঁড়িয়ে, চোখে জল, কিন্তু মুখে স্থিরতা। সে ধীরে বলে, ভেঙে পড়বেন না মা। আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন। রেবেকা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, হ্যাঁ, তাঁরই উপর তো ভরসা আছে। এই কষ্ট কীভাবে সইব জানি না।
দীর্ঘ হাসপাতালে কাটানো দিন শেষে নাফিজাকে বাড়ি ফিরিয়ে আনা হয়। কিন্তু জীবন আর আগের মতো নেই। দেহে এখন এক পায়ের শূন্যতা, আর মনের কোণে বেদনার ঘূর্ণি। পঙ্গুত্বের কারণে চাকরি চলে যায়, সংসারের পথ আরও কঠিন হয়ে পড়ে। রেবেকা অসহায় হয়ে ভাবেন। মেয়ের কী হবে! কে হবে আশ্রয়? এই বাস্তবতার মুখে কেমন করে চলবে দিন?
নাফিজা–রিফাত যখন একসাথে সুখের স্বপ্ন বুনছিল, তখনই এক কালো মেঘ এসে ঢেকে দিলো তাদের আকাশ। রিফাত পরিবারের কাছে বলে, আমি নাফিজাকে বিয়ে করতে চাই। বাবা, মোহন খান শব্দের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বললেন, পঙ্গু মেয়েকে ঘরের বউ করা যাবে না। ওর তো চাকরিও নেই এখন। তুমি ওর জীবন থেকে সরে দাঁড়াও, ওর বোঝা আমাদের ঘাড়ে তুলে নিব কেন? রিফাত বলল, বাবা, এমন স্বার্থপর কেন হচ্ছেন? ভালোবাসা তো দয়া নয়। আমি নাফিজাকে ভালোবাসি ওর দেহকে নয় ওর মানসিকতাকে। মোহন খান ধমকের স্বরে বললেন, তর্ক করো না! আমার চোখের সামনে থেকে চলে যাও।
রিফাত নাফিজার সামনে হাজির হয়। কিন্তু কণ্ঠে স্থিরতা, বলল রিফাত, নাফিজা আমরা বিয়ে করব। নাফিজা একটু থেমে, মুখ ঘুরিয়ে বলে, রিফাত, তুমি এখন বিয়ে করতে চাও, সেটা করুণা। আমি কারো করুণা চাই না। রিফাত হতভম্ব হয়ে বলল, করুণা? ভালোবাসা করুণার নয় একটি সম্মানের সম্পর্ক। তোমাকে ভালোবাসি, সম্মান করি। তুমি আজও আমার প্রাণশক্তি, আমার জীবন। নাফিজা গম্ভীর গলায় বলে, তোমার পরিবার যখন আমায় গ্রহণ করছে না, তখন তুমি কীভাবে এই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখবে? রিফাত নিঃশ্বাস ফেলে বলে, আমি তোমাকে ছুড়ে ফেলতে ভালোবাসি নেই। তোমাকে ভালোবেসেছি আমার জীবন সাথী হিসেবে পাওয়ার জন্য। তোমাকে ছেড়ে যাওয়া মানে আমার আত্মাকে অস্বীকার করা। তোমার পাশে থাকব এই দুঃসময়ে এটা দায়িত্ব নয়, এটাই আমার ভালোবাসা। রেবেকা পাশে দাঁড়িয়ে সব শুনছিলেন। মুগ্ধ হয়ে মেয়েকে বলেন, মা, ছেলেটা সত্যিই ভালো। এমন ভালোবাসা জীবনে খুব কম পাওয়া যায়। ওকে গ্রহণ কর মা। মা রেবেকার চোখে জল, কিন্তু তাতে আনন্দের ঝিলিক। ও তোকে ভালোবাসে মা। এমন ছেলে ভাগ্যে কজনের জোটে? তুই ওকে গ্রহণ কর, সে তো তোকে হারাতে চায় না। নাফিজার চোখে তখন ভীষণ প্রশান্তি। রিফাতের ভালোবাসা, তার সংকল্প, তার সমস্ত দুর্বলের ওপর এক অটল আশ্রয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে রিফাতের হাত ধরে বলে, আমি চাই… আমি চাই তোমার সঙ্গে বাকি জীবনটা কাটাতে। নাফিজার মুখে এ কথা শোনার পর রিফাতের যেন এক অচিন্তনীয় উচ্ছ্বাস। সে নিজেই বিয়ের সমস্ত আয়োজন করে। শাড়ি থেকে অলঙ্কার, নিজে হাতে ফুল দিয়ে বাসর ঘর সাজিয়ে তোলে।
বিয়ের দিনে, যখন ঘোমটার আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো নাফিজা, রিফাত নিঃশ্বাস আটকে তাকিয়ে থাকে। “মাশা’আল্লাহ! কী অপূর্ব লাগছে তোমায়।” দুজন মধুময় বাসরে রাত কাটায়, নয়নজুড়ে স্নিগ্ধ ভালোবাসা আর হৃদয়ে অটুট প্রতিশ্রুতি।
বিয়ের কিছুদিন পর হঠাৎ একদিন… মোহন খান সোজা এসে দাঁড়ান রিফাতের সামনে, চোখে স্নিগ্ধতা। আমার বউমাকে নিয়ে যেতে এসেছি, বলেন তিনি নিঃশব্দ গলায়। চলো বাবা, বউমাকে নিয়ে ঘরে। রিফাত এক মুহূর্ত স্তব্ধ, চোখ ঝলমলিয়ে ওঠে আনন্দে। সে ধীরে নাফিজার দিকে এগিয়ে যায়। হাত ধরে বলে, চলো, আমার ঘরের আলো। নাফিজা এক বিন্দু অশ্রু নিয়ে বলে, আজ নিজেকে বড় ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে। যে ভালোবাসা আমি পেয়েছি, তা কল্পনারও বাইরে। ঘরভর্তি আনন্দ, চোখভর্তি স্বপ্ন, জীবনে যেন বসন্তের পুণর্জন্ম। তাদের সংসার হয়ে ওঠে ভালোবাসার ঠিকানা।
নাফিজার মনে এক গভীর প্রশান্তি। যে জীবন থেমে যেতে পারতো, সেই জীবনই এখন বেঁচে আছে এক অনন্য ভালোবাসার উচ্ছ্বাসে। আমি ভাগ্যবতী, কারণ এমন একজন মানুষকে পেয়েছি, সে আমার পাশে ছায়া মতো দাঁড়িয়ে আছে। সম্পর্ক টিকে সম্মান, ভালোবাসা আর পারস্পরিক আস্থার উপর। সব ভালোবাসা পূর্ণতা পাক। থাক বিশ্বাস, সম্মান আর ভালোবাসার মলাটে বাঁধা।